শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

গৃহকর্মীর সুরক্ষায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 

শাnariন্তা মারিয়া

বাড়ন্ত গড়ন নয়। বেশ অপুষ্টির শিকারই বলা চলে। তাই বয়স ১১-১২ হলেও দেখতে মনে হয় আট-নয় বছর। আদাবরের একটি ফ্যাটবাড়িতে কাজ করে মনি (প্রকৃত নাম নয়)। মা-বাবা ওর নাম রেখেছিলেন শামীমা। অভাবের সংসার বলে গ্রামের এক চাচির হাত ধরে শহরে চলে আসতে বাধ্য হয় সে। এই বাড়িতে ওকে কাজে রাখা হয়। বাড়ির ম্যাডামের নামও শামীমা। তাই ওর নাম পাল্টে রাখা হয় মনি। বলা হয়, ওর কাজ হবে শুধু বাড়ির ছোট্ট শিশুর সঙ্গে খেলা করা। থাকা, খাওয়া ও মাসে ৫০০ টাকা বেতন। অচেনা বাড়িতে, অচেনা নামে নিজেকেই অচেনা লাগে তার। কিছু দিন পর ধীরে ধীরে অনেক কাজই চাপে তার ঘাড়ে। রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা। কাজে একটু এদিক-ওদিক হলেই সবার গালাগাল। চড়, চুলটানা তো আছেই। সেই সঙ্গে যোগ হয় গরম খুন্তির ছ্যাঁকা। এর পর একদিন রান্নার সময় এক হাঁড়ি মাংস পুড়িয়ে ফেলায় তাকে প্রচ- মারধর করা হয়। অজ্ঞান হয়ে যায় মনি। জ্ঞান ফিরে সে নিজেকে আবিষ্কার করে ডাস্টবিনে। পাড়ার লোকেরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার মা আসে গ্রাম থেকে। অনেকে বলে থানায় রিপোর্ট করতে। কিন্তু বাড়ির সাহেব ও ম্যাডাম মায়ের হাতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। মামলা-মোকদ্দমা কিছুই হয় না। দগদগে ঘা আর আঘাতের ব্যথা নিয়ে গ্রামে ফিরে যায় মনি।

বাংলাদেশের যে কোনো বড় শহরের ফ্যাটবাড়িগুলোয় এমন মনির দেখা মিলবে। কিছু দিন আগে এক প্রখ্যাত ক্রিকেটারের বাড়ির কাজের মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়। নির্যাতনে বিকৃত সে মেয়েটির করুণ চেহারা আলোড়ন তোলে। বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় সাধারণত শিশু বা কিশোর বয়সী গৃহকর্মী রাখা হয়। গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরতদের বেশিরভাগই মেয়েশিশু বা কিশোরী। কারণ এদের বেতন কম। অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে শহরে আসে এরা। নিয়োগকর্তা, কর্ত্রী, নিয়োগকর্তার পরিবারের কোনো সদস্য দ্বারা এরা হামেশাই নির্যাতনের শিকার হয়। দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণসহ বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানির শিকার হয় এরা। নির্যাতনে শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুও নতুন কোনো বিষয় নয়। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে এ ধরনের খবর। যেহেতু এরা আসে খুবই প্রান্তিক অবস্থান থেকে, তাই অল্প টাকা নিয়ে তাদের পরিবার মামলা তুলে নেয় অধিকাংশ সময়। গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা, ২০১৫’ নামে একটি নীতিমালা প্রকাশ করে। এই নীতিমালা প্রসঙ্গে বলছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান শাপলানীড়ের অ্যাডভোকেসি অফিসার আতিকা বিনতে বাকীর সঙ্গে। জাপানের কয়েকজন নাগরিকের সহযোগিতায় ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে শাপলানীড়। আতিকা জানালেন, নীতিমালাটি যদি আইন হিসেবে পাস হয় তখন গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় সেটি মোটামুটি সহায়ক হবে। তাদের সংগঠন গৃহকর্মীদের জন্য ঢাকায় কয়েকটি কেন্দ্র করেছে। সেখানে গৃহকর্মের ফাঁকে তারা এসে লেখাপড়া শিখছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রকম হাতের কাজও শিখছে। যাতে ভবিষ্যতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে।

গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন রোধে সচেতন হতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। নারী-শিশুদের সহায়তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে, যার সুযোগ নিতে পারবে গৃহকর্মীরাও। যে কোনো নম্বর থেকে বিনামূল্যে ১০৯২১ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া সম্ভব।

আআ

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ