আবিদ আনাম : শুক্রবার দেশের বহুল পঠিত সংবাদমাধ্যম, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে যুগান্তকারী একটি প্রস্তাব দিয়েছেন শাইখ সিরাজ। বাংলার রূপ রস গন্ধ যাকে মুগ্ধ করেছে বারবার, সেই শাইখ সিরাজ মুগদ্ধ হয়েছেন আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ শরিফের রূপেও।
দেশের অন্যতম মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ তাই আল্লাহরঘরের পবিত্রতা রক্ষায় তিনি মক্কার কাবা শরিফের আঙিনায় মদিনার মসজিদে নববীতে মোবাইল নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছেন। তিনি আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা সুরক্ষা নিয়ে দুটি কথা শিরোনামের কলামে লিখেছেন, মোবাইল আজ আর শুধু কথা বলার যন্ত্র নয়।
মোবাইল রীতিমতো এক সম্প্রচার মাধ্যম। একই সঙ্গে বহু বিনোদনের এক মাধ্যম। আজকের অনলাইন দুনিয়ায় দরকারি জিনিসের যেমন ভাণ্ডার রয়েছে, রয়েছে বহু অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর বিনোদনের ব্যবস্থাও। এই মোবাইলই মানুষের ধ্যান-জ্ঞান ও মগ্নতাকে পদে পদে নষ্ট করছে। একজন আরেকজনের ইবাদত নষ্টের জন্য নিজের অজ্ঞাতেই দায়ী হয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও লিখেছেন, আজকের যুগের ‘স্মার্ট ফোন’ সবার হাতে হাতে। তার সঙ্গে ‘সেলফি স্টিক’। পবিত্র বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করার সময়ও এই সেলফি স্টিক ধরে ভিডিও ফেসবুক লাইভে ব্যস্ত অনেকেই।
পবিত্র আল্লাহর ঘরের চারদিকে এক-দেড় ফুটের মধ্যেই মানুষ একেবারে বেসামাল। এক প্রায় বৃদ্ধা মা হজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার পোজ দিচ্ছেন, আর তার ছেলে ছবি তুলছেন। এই একই প্রবণতা সব দেশের, সব বর্ণের মানুষের মধ্যেই। আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা ভুলে দীর্ঘদিন পর পরিচিত কোনো মানুষকে দেখে হুড়মুড় করে জড়িয়ে ধরে মোবাইলে ছবি তোলার প্রবণতাও লক্ষ্য করলাম।
যতদূর জানি, সৌদি আরবে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটস অ্যাপের মতো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের যথেচ্ছ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু মানুষ সৌদি আরব পৌঁছেই এগুলো ব্যবহারের বিকল্প পথের সন্ধান পেয়ে যায়। তারা মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগে কাবা শরিফের সঙ্গে নিজের বাড়ি, আড্ডা কিংবা অন্য যে কোনো স্থানের ভিডিও সংযোগ স্থাপন করেন।
মানুষের ইবাদতের মগ্নতা নষ্ট করার এই প্রবণতাকে ইসলাম কখনই স্বীকার যেমন করে না, প্রশ্রয়ও দেয় না। আবার দেখেছি অনেক হাজী নামাজ আদায় করছেন তার পাশেই শোরচিৎকার করে হামেশাই ফোনে কথাবার্তা চলছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অপ্রয়োজনীয় পারিবারিক আলাপ চলছে। আগে কাবা শরিফের প্রতিটি স্থানে অত্যন্ত নীরব ও পবিত্র পরিবেশে নামাজ আদায় ও ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ ছিল।
এখন সেই সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে। এখন মোবাইল প্রযুক্তিই মানুষের সব ধ্যান ভাঙানোর জন্য সবচেয়ে আগে ভূমিকা রাখছে। পুণ্যস্থানের পবিত্রতা পর্যন্ত মোবাইলের দ্বারা নষ্ট হচ্ছে প্রতি পদে পদে।
জনাব শাইখ সিরাজ এবারের হজ পালনের স্মৃতিকথা উল্লেখ করে বলেন, পাঁচ দিন মক্কায় থেকে মদিনায় গেলাম। মক্কার চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুশীতল মদিনা মনোয়ারা। রসুল (সা.) রওজা মোবারক ও মসজিদ মসজিদে নববী।
আগে সেখানে দেখেছি মানুষের গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নজির, এবার দেখলাম সেখানেও একই চিত্র। নবীজী (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের সময়ও বেসামাল মানুষ মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন।
ফোনে অবলীলায় কথা বলছেন। আরেকজনের নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন দূরের কথা, তার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের এর চেয়ে বড় নজির আর কী হতে পারে? জান্নাতুল বাকী, রসুল (সা.)-এর বিবি, কন্যাসহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের কবরস্থান যেখানে গিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মনটা সর্বোচ্চ নরম হয়ে যায়, সেখানেও দেখলাম একই তত্পরতা।
তিনি লেখাটির এক পর্যায়ে এসে বলেছেন, আমার খুব ইচ্ছা, এই লেখাটি সৌদি আরবের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছনোর। সৌদি সরকারের উদ্দেশ্যে তথা পবিত্র মক্কা ও মদিনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আমার বিনীত অনুরোধ আল্লাহ ও রসুলের পবিত্র ঘরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হোক।
এইচএ