রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ধর্মহীন শিক্ষানীতি ইসলামি জনতা প্রতিহত করবে: আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

babunagari-আওয়ার ইসলাম: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মহীন করে সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ মুসলমানের সন্তানকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিতর্কিত ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ক্রমান্বয়ে ইসলামি ভাবধারার পাঠসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার টেক্সট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় ইসলামী জনতা রক্তের বিনিময়ে হলেও তা প্রতিহত করবে।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, দেশ ও জাতি গঠনে আদর্শ নাগরিক সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বুনিয়াদ হলো প্রাইমারি শিক্ষা। আর ধর্মীয় শিক্ষাই মানুষকে আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলে। বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যকি স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু সংকোচনই করেনি বরং ইসলামধর্ম বিষয় এবং মুসলিম সংস্কৃতি পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলেছে। শিক্ষামন্ত্রী বাম-ঘরানার হওয়ায় এর পরিনাম কি ভয়াবহ হবে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। এদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের ওপর আঘাত কখনো বরদাশত করেনা। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজের বর্তমান ইসলামবিচ্ছিন্ন শিক্ষাব্যবস্থাকে আইনি ভিত্তিদান এবং কওমি মাদরাসাসমূহকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ নামে একটি বিতর্কিত আইন তড়িঘড়ি পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি আজ বাদ জোহর ঢাকা মীরপুরস্থ জামিয়া কাসেমিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত কথা বলেন। জামিয়ার মুহতামিম মাওলানা জুনাইদ আল-হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, আল্লামা নুর হোসেন কাসেমী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা মনির আহমদ, মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক, মাওলানা রেজাউল করিম প্রমূখ।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আরো বলেন, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহ ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার নীতি-আদর্শকে কঠোরভাবে অনুসরণ করেই পরিচালিত হয়। দেওবন্দের ৮ মূলনীতির ৭ নম্বর হলো ‘এর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সরকারের অংশীদারিত্ব ক্ষতিকর’। সুতরাং সরকারের কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এরকম শিক্ষা সনদের মান দিলে, তা এই মূলনীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। বুজর্গানে দ্বীনের কঠোর সাধনা, ত্যাগ এবং চোখের পানির ফসলই হচ্ছে এসব কওমী মাদরাসা। ধৈর্য্য, সহনশীলতা, নেক আমলের মানসিকতা, দেশপ্রেম, পিতা-মাতার আনুগত্য, মুুরুব্বী ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পারিবারিক ও সামজিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষণ, মানব সেবা, সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সর্বোপরি আত্মার উৎকর্ষ সাধন করে শিক্ষার্থীদের আদর্শবান হিসেব গড়ে তোলাই হচ্ছে কওমী মাদরাসা শিক্ষার মূল সৌন্দর্য। শিক্ষা ও দীক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় কওমী শিক্ষাব্যবস্থায়। সে কারণেই আমদের দাবী হলো, যেভাবে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বিন্দুমাত্রও নষ্ট না হয় সে ভাবেই দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান দিতে হবে।

আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী বলেন, কওমী সনদের স্বীকৃতির নামে মুলা ঝুলিয়ে আলেম সমাজে বিভক্তি তৈরীর কাজ সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যাতে কওমী মাদরাসা শক্তি দূর্বল হয়ে যায়। দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে সনদের মান দিতে হবে। এর বাইরে কোন স্বীকৃতি আমরা চাই না।

আল্লামা নুর হোসেন কাসেমী বলেন, স্বাধীনভাবে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করা নাগরিক অধিকার। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারেও সরকার হস্তক্ষেপ করছে? জনগণের মনে এমন সন্দেহ জোরালো হলে, দেশের স্থিতিশীলতার জন্যে সেটা মারাত্মক ক্ষতিকর হবে। বিতর্কিত কারো প্ররোচনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণে কওমী সনদের স্বীকৃতি ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ কখনো মেনে নেবে না।

আরআর


সম্পর্কিত খবর