আওয়ার ইসলাম: ভারতে বিজেপি শাসিত গুজরাটে কয়েকশ’ দলিত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছে। গতকাল (মঙ্গলবার) গুজরাটের তিন প্রধান শহর আহমেদাবাদ, কলোল এবং সুরেন্দ্রনগরে হওয়া অনুষ্ঠানে দলিতরা বৌদ্ধ ধর্মে শামিল হন। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের দাবি, প্রায় দুই হাজার দলিত বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেয়া এমবিএ ছাত্র মৌলিক চৌহান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম জাতি প্রথা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে। উনা কান্ডের পর আমি সিদ্ধান্ত নিই আমাকে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এতে সকলেই সমান।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমি হিন্দু ধর্ম থেকে বৌদ্ধ হয়েছি। আশা করছি এবার জাতি প্রথার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।’
আহমেদাবাদ, কলোল এবং সুরেন্দ্রনগরে গুজরাট বৌদ্ধ মহাসভা এবং গুজরাট বৌদ্ধ একাডেমী বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কলোলে দীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজক মহেন্দ্র উপাসক বলেন, ‘এই দীক্ষা অনুষ্ঠানকে উনা কান্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা উচিত নয়। তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি যদি সমস্ত দলিত বৌদ্ধ হয়ে যেত তাহলে উনার ঘটনা ঘটত না। আমাদের উদ্দেশ্য এটাই যে, আমরা জাতি প্রথা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা দিচ্ছি।’
মহেন্দ্র উপাসক আরো বলেন, ‘দীক্ষা নেয়া লোকদের জাতি জানতে চাওয়া হয়নি। কিন্তু এতে শামিল বেশিরভাগ লোকেরাই দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ।’
গত জুলাইতে গুজরাটের উনায় দলিত যুবকদের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে গুজরাটের বনাসকান্ঠা জেলায় ১৫ হাজার দলিত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করবেন বলে দলিত নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
জেলার দলিত সংগঠনের প্রধান দলপত ভাই ভাটিয়া ওই সময় বলেছিলেন, ‘দলিত সমাজের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অন্যায় করা হচ্ছে। তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে ১৫ হাজার দলিত বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করবে।’
গত ১১ জুলাই গুজরাটের উনায় মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোকে কেন্দ্র করে ৪ দলিত যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি গাড়ির পিছনে বেঁধে তাদের নির্মমভাবে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় গোটা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হন দলিতরা। এ সময় বেশ কয়েকজন দলিত যুবক বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। ভারতীয় সংসদেও ওই ঘটনায় বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘দলিত বিরোধী সরকার’ বলে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করেন।
তাছাড়া বিজেপি শাসিত গুজরাট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনিই ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পায়।
সূত্র: পার্স টুডে
এফএফ