শাহ আলম সাইফ; গোয়াইনঘাট
সিলেটের জাফলং পাথর কোয়ারিতে যান্ত্রিক ও ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অপারেশন-৩ শাখা হতে সহকারী সচিব শিরীন সুলতানা স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পত্রটির কপি সিলেটের জেলা প্রশাসক হয়ে তার অনুলিপি গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে আসে। এরপর থেকেই কোয়ারি থেকে বোমা মেশিন এবং সেইপ মেশিনসহ সব ধরনের ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেও পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা, ধরপাকড় ও পুলিশি আতঙ্কে পাথর উত্তোলনের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ জাফলং কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক বারকি পাথর শ্রমিকরা। কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন পক্রিয়া বন্ধের ফলে চলছে না কোনো বারকি নৌকা, সেইপ নৌকা, পাথর টানার হাজার হাজার ট্রাক্টর এবং ট্রাক। পাথরশূন্য থাকায় এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার পাথর ভাঙার ছোট বড় কয়েক সহস্রাধিক স্টোন ক্রাশার মিল। বড় ধরনের লোকসান এড়াতে বেশিরভাগ স্টোন ক্রাশার মিলের মালিকরা তাদের শ্রমিকদের বিদায় দিয়ে মিল বন্ধ ঘোষণা করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এক কথায় কোয়ারির পাথর উত্তোলন, পরিবহন ও পাথর ভাঙার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কোয়ারিসমূহে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ায় চরম দুঃসহ জীবনযাপন করছেন শ্রমিকরা। গত শনিবার পরিদর্শনের সময় আলাপকালে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে জাফলংয়ে সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন লক্ষাধিক বারকি ও পাথর শ্রমিক।
তারা জানান, সুদীর্ঘকাল থেকে এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে বর্তমানে এসব কোয়ারির পাথরের স্তর অনেকটা গভীরে চলে গেছে। তারা জানান, গভীর গর্তের ভেতর থেকে পাথর তুলতে বালি অপসারণ ও সেচের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা যান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া কোনক্রমেই ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে এসব গর্তের পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। তাই শেলু মেশিন এবং সেইপ মেশিন ছাড়া পাথর গর্ত তৈরি করা এবং পাথর উত্তোলন করা যায় না। এমতাবস্থায় এ পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতে গেলেই প্রশাসন থেকে চালানো হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। যে কারণে বাধ্য হয়েই বন্ধ রাখতে হচ্ছে পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়া।
উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কোয়ারিতেই প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা হয়। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন আমাদের সেইপ মেশিন, নৌকা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় কোয়ারিতে কাজে গেলে চরম আতঙ্কে থাকি আমরা। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। বেকার হয়ে পড়ায় বর্তমানে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।
জাফলং কোয়ারিতেও স্টোন ক্রাশার মিলগুলোতে ন্যূনতম ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে দীর্ঘদিন থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমানে কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় আমাদের সাধারণ শ্রমিক পরিবারে যেন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেটের সবকটি এলাকায় এক রকম চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক বারকি ও পাথর শ্রমিক। কর্মহীন এসব মানুষের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্দশাগ্রস্ত প্রতিটি শ্রমিক। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা চলবে।
এসআইআর