আওয়ার ইসলাম : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে হিন্দু শিক্ষকদের দিয়ে ইসলাম শিক্ষার ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিসে ধর্মীয় শিক্ষক চেয়ে অনেক আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ছাত্র ও অভিভাবকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩৮টি। এর মধ্যে ৬৬টি সম্পূর্ণ সরকারি এবং নতুন জাতীয়করণ ৫৭টি। সরকারি ১৩৮টি স্কুলের বিপরীতে ১৫৯ জন ধর্মীয় শিক্ষক কর্মরত থাকলেও এর মধ্যে ১৯টি স্কুলে কোনো ধর্মীয় শিক্ষক নেই। উল্লেখিত ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষক-শিক্ষিকার ৬৪৯টি পদের বিপরীতে শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ৫৪৬। শূন্যপদের সংখ্যা ১০৩টি। এর মধ্যে নারী শিক্ষক ৩৯০ জন ও পুরুষ ১৫৬ জন। শিক্ষা অফিসের দেয়া তথ্যমতে, উপজেলা ১৩৮টি সরকারি স্কুলের মোট ২০ হাজার ৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মুসলিম শিক্ষার্থী প্রায় ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে মুসলমান শিক্ষকের সংখ্যা ১৫৯ জন এবং হিন্দু শিক্ষক রয়েছেন ৩৮৭ জন।
মুসলিম শিক্ষক নেই এমন স্কুলগুলো হলো, সুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গন্ধর্বপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভীমসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরুনা ফয়জুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়নশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর জিলাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব জামসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিশিরা খাসিয়া পুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়পরান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর পাঁচাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাকড়িছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম আশিদ্রোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামাসিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শ্রীমঙ্গল হাউজিং এস্টেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বালিশিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অভিভাবক মনির মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি স্কুলে সব ধর্মের শিক্ষার্থীই থাকে। প্রত্যেক ধর্মেরই শিক্ষক স্কুলে থাকা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে স্কুলে মুসলিম শিক্ষক না থাকাটা খুবই বেদনাদায়ক।
মুসলিম শিক্ষক সংকটের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে যে ১৯টি স্কুলে মুসলিম শিক্ষক নেই তার সবগুলো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। অনেক স্কুলে প্রায় ৮৭ ভাগ মুসলিম শিক্ষার্থীর বিপরীতে সেখানে অনুপাতিক হারে মুসলিম শিক্ষক পদায়ন বা নিয়োগ দেয়া হয়নি। যে কারণে এসব স্কুলে শিক্ষক পোস্টিং দিলেও কর্মস্থলে যোগ দেয়ার আগেই অনেক শিক্ষক তদবির করে বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নেন।এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক পদায়নের কারণেও উপজেলার সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা অনেকেই উচ্চশিক্ষিত। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষকদের সকল বিষয়ের ওপর পুরোপুরিভাবে ট্রেন্ডআপ করার কারণে তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা দিতে তাদের কোনো সমস্যায় পড়ার কথা নয়। তিনি বলেন, প্রতিটি স্কুলে একজন করে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে উপজেলা সমন্বয় সভায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়েও শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র: মানবজমিন
এফএফ