আওয়ার ইসলাম : দুই নাতনি-পুত্র অভিষেক ও ঐশ্বর্যের মেয়ে আরাধ্য আর কন্যা শ্বেতার মেয়ে নব্য নভেলিকে একটি অবেগঘন চিঠি লিখেছেন অমিতাভ বচ্চন। নারী বলে তারা যে কারো চেয়ে কম নয়, পুরুষের চেয়ে খাটো নয় এ কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘বিগ বি’।
নিজে আকাশছোঁয়া খ্যাতি, অঢেল সম্পত্তি-প্রতিপত্তি, সম্মানের অধিকারী হলেও, নাতনিদের নিয়ে যেন বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন বলিউডের এই কিংবদন্তি। ভারতে একের পর এক ঘটে চলা শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের ঘটনা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভাবিয়ে তুলছে পুরুষশাসিত সমাজের আস্ফলন, মেয়েদের ওপর সব কিছু চাপিয়ে দেওয়ার এই ‘ভারতীয় সংস্কৃতি’।
দেখতে দেখতে কৈশোর পেরোতে চলেছে নব্য নভেলি, চোখের সামনে বেড়ে উঠছে সে দিনের সেই ছোট্ট আরাধ্যও। আর মাত্র কয়েকটা বছর,তারপর তো ওদের ওপরও চড়াও হবে সমাজ, বলে দেবে এটা করো না, ওটা পরো না, এমন কথা বলো না। সে জন্যই হয়ত নিজের জীবদ্দশাতেই নাতনিদের সাবধান করতে চেয়েছেন অমিতাভ, দিতে চেয়েছেন শক্তি, ধরেছেন কলম।
শুরুতেই আরাধ্য ও নব্যকে ‘বিগ বি’ মনে করিয়ে দিয়েছেন, দু'জনের কাঁধে থাকা দু’টি মূল্যবান বংশ পরিচয়ের কথা। আরাধ্যের পূর্বপুরুষ হলো ড. হরিবংশ রাই বচ্চন (অমিতাভের বাবা) আর নব্য হলো শ্রী এইচপি নন্দার উত্তরসূরি। বলা বাহুল্য, এই উত্তরাধিকার সূত্রে নব্য ও আরাধ্য নিজের অজান্তেই খ্যাতি, মর্যাদা ও স্বীকৃতি পেয়েছে।
কিন্তু খ্যাতিই তো সব নয়। তাই তো অমিতাভের লেখনীতে এসেছে, ‘তোমাদের কারো নন্দা, আবার কারো বচ্চন পদবী, কিন্তু তোমরা দু’জনই যে মেয়ে! আর শুধুমাত্র নারী বলেই মানুষ তোমাদের ওপর চাপিয়ে দেবে তাদের চিন্তাধারা, গ-ির মধ্যে ধরে রাখতে চাইবে তোমাদের। তারাই তোমাদেরকে বলে দেবে তোমরা কী পোশাক পরবে, কেমন ব্যবহার করবে, কাদের সঙ্গে দেখা করবে, কোথায় যেতে পারবে বা পারবে না এমন সবকিছু। কিন্তু তোমরা অন্যের বিচারবুদ্ধির ছায়ায় থেকো না। আপন প্রজ্ঞার আলোকে নিজের মনের কথা শুনো। স্কার্টের দৈর্ঘ্য দেখে তোমাদের চরিত্রের মাপকাঠি তৈরি করতে পারে এমন সুযোগ অন্যদের দিও না তোমরা। কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে বা করবে না এ সিদ্ধান্ত নেবে তোমরা, এমনকি বিয়ের ক্ষেত্রেও একমাত্র নিজের মনের কথা শুনবে, অন্য কারোর নয়। ”
চিঠিটি ‘বিগ বি’ একটি ভিডিও-বার্তার মাধ্যমে পড়ে শুনিয়েছেন। শেয়ার করেছেন টুইটার, ফেসবুকেও। বলেছেন, ‘লোকে কথা বলবে, অনেক ভয়ানক সব কথাও হয়ত তোমাদের শুনতে হবে। কিন্তু লোকে কী বললো, তা নিয়ে কখনও ভেবো না। দিনের শেষে যে তোমাদের নিজেদেরই নিজ নিজ কাজের ফল পেতে হবে। সুতরাং সবসময় নিজে সিদ্ধান্ত নিও।'
চিঠির শেষ দিকে এসে অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন,‘নব্য, তোমার নাম বা পদবী তোমায় যে বিশেষ সুবিধা দেবে, তা দিয়ে কিন্তু তুমি কঠিন পরিস্থিতি এড়াতে পারবে না, কারণ, তুমি একজন নারী। আরাধ্য, সময় এলে, তখন যদি আমি না-ও থাকি, তুমি আমার এই কথাগুলো দেখবে, বুঝতে পারবে। আমার মনে হয়, আজ যা বলছি, তখনও তা প্রাসঙ্গিক থাকবে।'
‘আমার বিশ্বাস, তোমাদের মতো মেয়েরাই নারীদের এ পরিস্থিতি বদলে দেবে। কাজটা হয়ত সহজ নয়। তারপরও অন্যের বিবেচনার ঊর্ধ্বে গিয়ে তোমরা নিজেদের লক্ষ্য স্থির করো, নিজের পছন্দ অনুযায়ী পথ নির্বাচন করো। আমার বিশ্বাস, আমি যা যা করেছি, তোমরা তার চেয়েও বেশি অর্জন করে দেখাবে। অমিতাভ বচ্চন হিসেবে নয়, তোমাদের দাদা হিসেবে সেটাই হবে আমার জন্য সবচেয়ে সম্মানের।'
আগামীর নারীর জন্য, আদরের নাতনিদের জন্য এ কথাই লিখেছেন অমিতাভ বচ্চন।
-এজে