আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হামলাগুলোর সঙ্গে কোন আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকার বিষয়টি বরাবরই নাকচ করে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে জঙ্গি বিশেষজ্ঞরা মনে করে, এর মাধ্যমে আসলে একটি মারাত্মক ভুল করা হচ্ছে। কারণ এসব জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগর বিষয়টি অনেকাংশেই পরিষ্কার।
বুধবার প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সম্প্রতি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসাবে যাদের নাম প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পুলিশ, তাদের অনেককেই নিজেদের কর্মী বলে জানিয়েছে আইএস। বাংলাদেশে গত মাসে যে ২৬১ জনের নিখোঁজ তালিকা প্রকাশে করেছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল জিলানী বা আবু জিদাল, যিনি সিরিয়ায় লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আবু জিদালের প্রকৃত নাম আশিকুর রহমান, যিনি গতবছর মাঝপথে প্রকৌশল পড়া ছেড়ে দিয়ে কথিত ইসলামিক স্টেটের পক্ষে লড়াই করতে সিরিয়া যান। গত গত এপ্রিল মাসে দেয়া একটি ঘোষণায় আইএস জানিয়েছে, একটি লড়াই করতে গিয়ে ২৩ মিলিমিটার কামানের গুলিতে সে নিহত হয়। গুগল সার্চ করলেই আইএসের ওই ঘোষণাটি বেরিয়ে আসে। তবে বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের মুখপাত্র মুফতি মোহাম্মদ খান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ''তার পরিবার বা পুলিশ, কেউই তার মৃত্যুর খবর জানায়নি। এ কারণেই তার নাম ওই তালিকায় রয়েছে।''
রয়টার্স বলছে, বহুল প্রচারিত একটি তালিকায় একজন মৃত জিহাদির নাম থাকার বিষয়টি তুলে ধরছে যে, কিভাবে বাংলাদেশের উগ্রবাদী ইসলামি গ্রুপগুলোর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
গত ১ জুলাই গুলশানের একটি রেস্তোরায় হামলাকারী পাঁচ তরুণকে নিজেদের কর্মী বলে জানায় আইএসের মুখপাত্র আমাক বার্তা সংস্থা। ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের গুলিতে যে নয়জন জঙ্গি নিহত হয়, তারাও একই ধরণের হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশ এবং সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তারা বরাবরই দাবি করে আসছেন, এরা সবাই দেশীয় জঙ্গি, যাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোন যোগাযোগ নেই। তারা সমসময়েই দাবি করছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এটিকে বড় ধরণের একটি ভুল বলে মনে করেন জঙ্গি বিশেষজ্ঞরা।
জঙ্গি হামলাগুলোর জন্য দায়ী বলে তামিম আহমেদ চৌধুরী বলে মঙ্গলবার একজন প্রধান সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশ করে বাংলাদেশের পুলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকেই গত এপ্রিলে শেখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ নামে বাংলাদেশ কমান্ডার হিসাবে নাম ঘোষণা করেছিল আইএস।
তামিম চৌধুরী জড়িত থাকার বিষয়টি ঘোষণার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব মেনে নেয়া হলো কিনা, জিজ্ঞেস করলে ঢাকা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম রয়টার্সকে বলেন, 'আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। বাংলাদেশে কোন আইএস নেই।'
বিশ্বের অনেক দেশেই এককভাবে জিহাদি গ্রুপগুলো আইএসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এর বাইরে আরো অন্তত ২২ বিদেশী তাদের দেশ ছেড়ে সরাসরি আইএসের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে। তবে স্বঘোষিত আইএস সমর্থক আর আইএসের কমান্ড কন্ট্রোলের পার্থক্যের বিষয়টি অস্পষ্ট। গত জুনমাসেই জঙ্গি বিরোধী বড় ধরণের একটি অভিযান চালায় পুলিশ, যেখানে ১১ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার করা হয়।
নয়া দিল্লি ভিত্তিক থিংক ট্যাক, সোসাইটি ফর দি স্ট্যাডি অফ পিস এন্ড কনফ্লিট এর নির্বাহী পরিচালক অনিমেষ রাউল রয়টার্সকে বলেন, 'তারা এখনো প্রচলিত জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোর দিকেই মনোযোগ রেখেছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না যে, আইএস বা একিউআইস (ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়েদা) জঙ্গিরা ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করছে এবং তৃণমূলের জঙ্গি এবং উগ্র তরুণদের সমর্থন আদায় করছে।'
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক রোহান গুনারত্না তার একটি গবেষণায় তুলে ধরেছেন যে, 'বাংলাদেশের জঙ্গিরা ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে অর্থ, নির্দেশনা এবং সহায়তা পাচ্ছে।' তবে জঙ্গি গ্রুপ গুলো কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে, কারা কিভাবে তাদের কাছে পাঠাচ্ছে, তাদের পুরোপুরি সনাক্ত করতে পারা বা সেটি বন্ধ করার কোন উদাহরণ নেই বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে।
সূত্র : বিবিসি
এফএফ