আওয়ার ইসলাম: জম্মু-কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার কাশ্মীরি নেতারা ঐতিহাসিক জামিয়া মসজিদ পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিলে আইনশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখতে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ, কুলগাঁও, পুলওয়ামা ও সোপিয়ান জেলার সর্বত্র কারফিউ জারি করা হয়।
তবে বিভিন্ন স্থানে কারফিউ অমান্য করেই সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখায় সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা এবং কুলগাঁও জেলায় কারফিউয়ের পাশাপাশি উপত্যাকার অন্যত্র ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ এবং সিআরপিএফ জওয়ানরা বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন রয়েছে।
গতকাল শনিবার শ্রীনগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মিরের কয়েকটি শহর, নগর এবং গ্রামীণ এলাকায় প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়াড়া জেলায় একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাবাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
কারফিউ অধ্যুষিত কুপওয়াড়ার গুশি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে ছোঁড়া গুলিতে ৩ কিশোর আহত হয়।
অন্যদিকে, পেলেট গানের ছররা গুলিতে কমপক্ষে ২ ডজন তরুণ আহত হয়। পুলিশি বলপ্রয়োগে গোটা উপত্যাকাজুড়ে কমপক্ষে ১২০ জন বেসামরিক মানুষজন আহত হয়।
শ্রীনগরে প্রচুরসংখ্যক মানুষজন হাতে সবুজ পতাকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় মসজিদ থেকে জাতিসংঘের একটি দফতর পর্যন্ত মিছিল বের করেন। তারা দফতরের বাইরে ‘স্বাধীনতা চাই’ বলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উপত্যাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করে তারা জাতিসঙ্ঘকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের দাবি জানায়।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উদ্দেশ্যে পাথর ছুঁড়লে পাল্টা জবাবে পুলিশ লাঠি চালিয়ে এবং কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একইদিন শ্রীনগরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে লালচকেও প্রবল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কাশ্মিরে সোপিয়ানে মানুষজন জুমা নামাজ শেষে বিভিন্নস্থানে মিছিল বের করে। এখানে সেনা ক্যাম্প, পুলিশ থানা, পুলিশ পিকেট এবং অন্যান্যস্থানে হামলা করার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ জনতা।
বিক্ষোভকারীরা সোপিয়ানের শ্রীমালে পশুপালন দফতরের একটি গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এখানে নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়া লোকদের মোকাবিলা করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানোর পাশাপাশি ‘পেলেট গান’ ব্যবহার করা হলে অনেক মানুষ আহত হন।
সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আগে থেকেই গ্রেফতার করা হয় হুররিয়াত নেতা সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক এবং অন্য নেতাদের।
অন্যদিকে, প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসাবে কাশ্মিরে রোববার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত বনধের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারফিউ, বনধ এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার জেরে গোটা কাশ্মিরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সরকারি পরিবহণ।
কাশ্মীরে গড়ে দৈনিক ১৫ হাজার পর্যটক গেলেও বর্তমান সময়ে তা কমে মাত্র ১২০০-এ দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সেখানকার ব্যবসা বাণিজ্য তথা আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কাশ্মীর নেতারা আজ (শনিবার) এবং আগামীকাল (রোববার) জোহর এবং মাগরিবের নামাজ সড়কের উপর আদায় করে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ডাক দিয়েছেন।
হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে সহিংস প্রতিবাদ বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
সূত্র: ইকনা