আওয়ার ইসলাম: জঙ্গিবাদ দমনে কিছু সাফল্যে আত্মতৃপ্তিতে না পড়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, অতীতেও বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানসহ জেএমবি সদস্যদের দমনের ক্ষেত্রে আত্মতৃপ্তি দেখানোটা ভুল ছিল। বাংলা ভাই ও তার দোসরদের ফাঁসি দিয়েই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। তারুণ্যের চিন্তাগত মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্য, বিকারগ্রস্ততা ও বিভ্রম দূর করতে কেবল জঙ্গিবাদ বিরোধী আওয়াজ তোলাই যথেষ্ট নয়। বিকারগ্রস্ত হওয়ার কারণ উদ্ঘাটন করতে না পারলে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয়। বিভ্রান্তির শিকার তারুণ্যের বিরুদ্ধে মানবিক আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ও তৎসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের একটু মাটিতে পা রেখে আলিয়া মাদরাসার সিলেবাস নিয়ে ভাবার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, নিজামীদের করা সিলেবাস নিয়ে এখনো চলছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের টাকায় এখনো মওদুদীবাদ ছাপা হচ্ছে।
শুক্রবার জুমার পর ২ টায় বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঘোষিত ২৯ জুলাই ১৬ জঙ্গিবাদপ্রতিরোধ দিবস উদযাপন উপলক্ষে জমিয়ত চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এসব কথা বলেন।
জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রহীম কাসেমীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সার্কিট হাউস মসজিদের খতীব আল্লামা আরীফ উদ্দীন মারুফ, বাইতুল মারুফ রামপুরার খতীব আল্লামা ইয়াহইয়া মাহমূদ, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইফী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, ঢাবি শিক্ষক মাওলানা হোসাইনুল বান্না, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন প্রমুখ।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেই খোশ মেজাজে থাকলে চলবে না জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধমূলক বিষয় সিলেবাসভুক্ত করতে হবে। উদার, মানবিক ও প্রেমের ধর্ম ইসলামের নামে যেহেতু জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে- তাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম সংখ্যালঘুদের সম্মান করে বলে জমিয়ত সভাপতি বলেন, ইসলামে মূর্তিপুজা নিষিদ্ধ অথচ কুরআনে তাদের দেব-দেবীকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। একজন মুসলমান নিজের প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমেও অমুসলিমদের প্রাণ রক্ষা করবে। কারণ তারা এ দেশের মুসলমানদের কাছে আমানত।
জঙ্গিবাদবিরোধী বর্তমান আন্দোলন, বিশ্লেষণ একমাত্রিক অতি সরলিকরণ ও হস্তিদর্শনের মতো হয়ে যাচ্ছে দাবি করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, জঙ্গিবাদ কেবল ইসলাম ধর্মসংশ্লিষ্ট সমস্যা নয় সব ধর্মের নামেই সন্ত্রাস হয়। ধর্মছাড়াও হতে পারে। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মূল সূত্রটা বের করতে হবে। লেখায় যেনো কোনোভাবেই জঙ্গিবাদপ্রসঙ্গটা রোমাঞ্চকরভাবে উপস্থাপিত না হয় এজন্য তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি হাতজোর করে অনুরোধ জানান।
সরকারের কাছে জঙ্গিদমনের ক্ষেত্রে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন জমিয়ত সভাপতি। এগুলো হলো- এক. যারা জঙ্গিবাদের অর্থ সুরক্ষা দিচ্ছে সে জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। দুই. কার্যকর জঙ্গিবাদবিরোধী সেল গঠন করতে হবে। তিন. শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রতিটি স্তরে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা তুলে ধরতে হবে।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মুফতি ইবরাহীম শিলাস্থানীর নেতৃত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কদমতলী থানার মাওলানা ইহতেশামুল হকের নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধমূলক গণসংযোগ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। ডেমরা থানায় মুফতি আহমাদুল্লাহর নেতৃত্বে গণসংযোগ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহে মাওলানা তাজুল ইসলাম ও মাওলানা আল আমিনের নেতৃত্বে মানববন্ধন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সৈয়দপুরে মাওলানা হারুন মিয়াজী ও মাওলানা আবুল কালামের নেতৃত্বে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরে মাওলানা হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে মসজিদভিত্তিক আলোচনাসভা ও গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের কানাইঘাটের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মুহাম্মদ বিন ইদরীস লক্ষ্মীপুরী জঙ্গিবাদ প্রতিরোধমূলক জনসংযোগ করেন এবং আলোচনা করেন। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, জামালপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবান, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলাসহ সারাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
আরআর