আওয়ার ইসলাম: রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ৯ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহতের সবাই জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সোমবার মধ্যরাতে অভিযান চালানোর সময় পুলিশের সাথে গোলাগুলির পর কল্যাণপুরের ঐ বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।
ভোর ৬ টার আগে অভিযান শুরু হয়ে প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী একটি অভিযানে বাড়ির ভেতরে থাকা ৯ জন 'জঙ্গি সদস্যের' সবাই নিহত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহমেদ জানিয়েছেন, সেখানে শেষরাতে ব্যাপক গোলাগুলি চলেছে।
তিনি জানান, মধ্যরাতে পুলিশ একটি নিয়মিত রেইডে বের হলে তারা হঠাৎ আক্রমনের শিকার হন। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে তারা কল্যাণপুরের ঐ বাড়িটি থেকে পুলিশের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। জঙ্গিরা হাতবোমা ও গ্রেনেডও ছুড়েছে বলে জানান মাসুদ আহমেদ।
রাতেই কল্যাণপুরে পুলিশের বিশেষ বাহিনি সোয়াট ও আশপাশের সবগুলো থানা থেকে পুলিশ এসে যোগ দেয়।
ভোর সাড়ে পাচটার সামান্য পরে সোয়াটসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা অভিযান শুরু করে যার নাম দেয়া হয়েছে 'অপারেশন স্টর্ম টুয়েন্ট সিক্স'।
পুলিশ বলছে, অভিযানে বাড়িতে অবস্থানকারী সকল ব্যক্তি মোট ন'জন নিহত হয়েছেন। অভিযানের পর ভেতরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য বম্ব ডিস্পোজাল টিমও কাজ করছে। বাড়িটি থেকে কিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে।
রাতে ঘটনাস্থল থেকে আহত একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
‘ইসলামের শত্রু নিপাত যাক’ বলে পুলিশকে গুলি
মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ভূইয়া মাহবুব বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে ৫ নম্বর রোডের একটি বাড়ি থেকে ‘ইসলামের শত্রু নিপাত যাক, আল্লাহু আকবার নারায়ে তাকবির’ বলে পুলিশের ওপর গুলি চালানো হয়েছে।সারারাত অপেক্ষার পর মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে জাহাজ বিল্ডিং নামের ওই বাড়িটিতে থাকা জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করে সোয়াত, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ওসি ভূইয়া মাহবুব হোসেন জানান, সোমবার রাত ১টার কিছুপর প্রথম ওই বাড়িটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে পুলিশ। বাড়ির তিনতলা পর্যন্ত ওঠার পর পাঁচতলা থেকে দুই যুবক নেমে এসে গুলি চালায়। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে গুলি লাগে। একই সঙ্গে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে হাসান নামে এক জঙ্গি আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। রাত প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি বিনিময় চলে। পরে পুরো এলাকাটি ঘিরে রেখে ভোরে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি যৌথভাবে অভিযান চালায়।
গুলশানের জঙ্গিদের সঙ্গে এদের মিল রয়েছে : আইজিপি
রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে গুলশানের হামলাকারীদের মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নিহত জঙ্গিদের পোশাক-আসবাব সবকিছুতেই গুলশানে হামলাকারীদের সঙ্গে মিল রয়েছে। তদন্ত শেষে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে। জঙ্গিরা গুলি করতে করতে পালাতে চেষ্টা করেছিলো। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেডও ছুড়ে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আইএসের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নিরাপত্তার স্বার্থে কল্যাণপুরের ২৭ স্কুল বন্ধ রাখার আহ্বান
এদিকে, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কল্যাণপুর এলাকায় অবস্থিত ২৭টি স্কুল আজ মঙ্গলবারের জন্য বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
হলি ক্রিসেন্ট মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম আহমেদ খান জানান, সকাল বেলা থেকে অভিভাবকরা বারবার ফোন করে জানতে চাচ্ছিল, তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবে কিনা। এরপর আমরা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আজকের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছি।
আস্তানায় প্রচুর বোমা রয়েছে : পুলিশ কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন কল্যাণপুরের ওই জঙ্গি আস্তানায় প্রচুর বোমা-বারুদ রয়েছে। এগুলো নিষ্ক্রীয় করতে হবে। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বোমগুলো নিষ্ক্রীয় করতে ৩/৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে আপাতত কাউতে যেতে দিচ্ছি না।
বোমাগুলো নিষ্ক্রীয় করার পর সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।