মোস্তফা ওয়াদুদ: সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে জুমার খুৎবা নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে সরকারি লোকেরা বিষটি মনিটরিং করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে একটি খুৎবাও ঠিক করে দেয়া হয়েছে।
সরকারের দাবি এভাবে মসজিদগুলো নজরদারি হলে মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে ম্যাসেজ কমবে। তবে বিষয়টি ইমাম-খতীবরা দেখছেন ভিন্নভাবে। সম্প্রতি ঢাকার শীর্ষ মুরুব্বি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এবং চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এবং হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ বিশিষ্ট আলেমগণ বিবৃতি দিয়েছেন।
খুৎবা নজরদারির বিষয়টি ভাবাচ্ছে অন্যান্য ইমাম খতীবদেরও। এবিষয়ে ঢাকার ৫জন খতীব আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোরকে জানিয়েছেন তাদের মতাত।
আল্লামা মাহমুদুল হাসান
খতীব : গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, গুলশান, ঢাকা -১২১২
মসজিদ আল্লাহর ঘর। সেখান থেকে আল্লাহর বড়ত্ত্বের কথা হবে। রাসূলের জীবনাদর্শ বয়ান হবে। ইসলামি বিধানাবলী হুকুম-আহকাম শেখানো হবে। মানুষজন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন থেকে দীন শিখবে। কুরআন শিখবে। কুরআনের আদেশ-নিষেধ জানবে। সে অনুযায়ী তারা জীবন পরিচালনা করবে। সমাজে সুন্দরভাবে বসবাস করবে। শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত থাকবে। মসজিদের খুৎবা নজরদারি করলে তো এসব ছাড়া আর কিছু পাবে না। সুতরাং যারা নজরদারি করার জন্য আসবে। তারা বরং খাটি মুমিন হয়ে ঘরে ফিরবে। সুতরাং জুমার খুৎবা নিয়ন্ত্রণের কোনো বিষয় নয়। এটি স্বাচ্ছন্দ্যে স্ব গতিতে প্রচারিত হলেই সাধারণ মুসুল্লিদের মঙ্গল হবে।
মুফতি আমজাদ হোসাইন
খতীব : নয়ানগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বারিধারা, ঢাকা - ১২১২
দেশের ইমাম ও খতীবগণ যাদের রয়েছে দীনের ছহীহ জ্ঞান। কুরআন ও হাদিসের সঠিক বুঝ। তাদের মাধ্যমে সরকার যদি বোর্ড গঠন করে দেশের অন্যন্য খতীবদের বক্তব্য প্রদানের দিক নির্দেশনা দেন তাহলে তা সঠিক হবে বলে বলে আমি মনে করি। কারণ যাদের কুরআন- হাদিসের ছহিহ জ্ঞান রয়েছে তারা কখনো জাতিকে বিপথগামী করতে পারেন না। তারা জাতিকে সঠিক ইসলামের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন এবং শান্তির বাণী শুনিয়ে থাকেন। এই দেশ পীর-আউলিয়া ও গাউছ-কুতুবদের দেশ। যে দেশের শতকরা ৯০% মুসলমান। যারা দেশে শান্তির বাণী শুনাতে চান। অশান্তিকে দূর করতে চান। শান্তিতে বসবাস করতে চান। কোনো রকম ঝগড়া-ফাসাদ মারামারি- হানানারি কারা পছন্দ করেন না। ইমামদের বক্তব্যের মাধ্যমে যদি এই বিষয়গুলো সমাজের সামনে চলে আসে তাহলে জাতি বড়োই উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মাওলানা মাহমুদুল হাসান
খতীব : ফরেষ্ট্রি সাইন্স এণ্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট জামে মসজিদ, সিলেট
সরকার যেমন দেশের উন্নতির জন্য কাজ করেন। তেমন মসজিদের খতীবগণ মানুষের উন্নতির জন্যই সদা নিবেদিত। সরকারকে কোনো কাজে চাপ সৃষ্টি করলে যেমন তার কাজে বিঘ্ন ঘটে। তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন না। তেমনি খতীবদের ক্ষেত্রে। সুতরাং সরকারের উচিত জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া। তাহলে দেশ-জনগণ-সমাজ সবাই শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জীবনযাপন করতে পারবে। সরকার দেশের মসজিদগুলোকে নিজস্ব গতিতে পরিচালনা করার সুযোগ করে দিলে অনেক অন্যায় থেকে মানুষ বেঁচে যাবে। দলাদলি ও রাজনীতি করার সুযোগ কোনো পক্ষই পাবে না। না হয় দেশের ধর্মীয় স্থাপনা মসজিদগুলোও পরিণত হবে রাজনৈতিক আখরায়।
মাওলানা তাওহীদুল ইসলাম
খতীব : বায়তুল আতিক জামে মসজিদ, নদ্দা, ঢাকা -১২১২
জুমার খুৎবা নজরদারি করার কোনো বিষয় নয়। কারণ নজরদারি করা হয় গোপন বিষয়কে। যা মানুষের আড়ালে থাকে। সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার বিসয়কে নজরদারি করা যায়। এক্ষেত্রে নজরদারি শব্দের ব্যবহার বেমানান। তাই আমি মনে করি জুমার খুৎবায় মানুষ যে দীন শিখতে পারছে। তা আমাদেন সাধারণ মুসুল্লিদের জন্য অনেক রাহনুমায়ীর (দিননির্দেশন) কাজ করে। তারা খতীব সাহেবের কাছে সরাসরি অনেক মাসআলা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পান না। নানান ব্যস্ততার কারণে সপ্তাহের অন্যান্য দিন সময় দিতে পারেন না। তাই সাপ্তাহিক বন্ধের দিন তারা সুযোগ করে মসজিদে আসেন খতীব সাহেবের বক্তব্য শুনেন। খতীব সাহেব দীনের ব্যাপারে তাদের নসীহত করেন। যে নসীহতের উপর তারা পুরো সপ্তাহ কাটান। এখন যদি সরকারের পক্ষ থেকে বিষয় নির্ধারণ করে দেয়া হয় তাহলে মানুষ চাহিদানুযায়ী দীন শেখার সুযোগ হারিয়ে ফেলবে। সঠিক ইসালামের বিপরীতে ভুল ইসলাম শিখবে। তাই জুমার খুৎবায় খতীবদের স্বাধীনতার সুযোগ দিতে হবে।
মুফতি জাবের কাসেমী
খতীব: সরদারবাড়ী জামে মসজিদ, মানিকনগর, ঢাকা-১২০৩
আমরা যারা সপ্তাহের একদিন জুমাপূর্ব বয়ানে আলোচনা করি। এ আলোচনার জন্য আমাদের দুইদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে কথার গভীরতা সৃষ্টি হয়। আলোচনায় নতুন নতুন কথা বেরিয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আমার নিদর্শনসমূহের মাঝে গবেষণা করো।’ এই গবেষণা ও চিন্তা করা সুযোগ পাওয়া যায়। এখন যদি সরকারের পক্ষ থেকে খুৎবা তৈরি করে দেয়া হয় তাহলে ইমামদের স্ব-আগ্রহী হয়ে যে গবেষণা করার বা রিসার্চ করার মন মানষিকতা সেটা হারিয়ে ফেলবে। বিষয়টি প্রকারান্তরে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে। তাছাড়া সরকার কোনো খুৎবা আগের দিন তৈরি করে দিলো। পর দিন শুক্রবারের আগেই সাধারণ মানুষ সেটা জেনে নিলো। তাহলে জানা জিনিস ইমাম সাহেবের মুখে শুনতে কি ভালো লাগবে? যে আগ্রহ নিয়ে মানুষ জুমার নামাজে আসে। সে আগ্রহ থাকবে? সুতরাং বিষয়টি আগে ভাবতে হবে। তারপর নিতে হবে সিদ্ধান্ত। এতে দেশ ও দশের কল্যাণ হবে বলে আমি মনে করি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর