উম্মে মাবরুহা : স্মার্ট, আধুনিক আর অনুকরণীয় নারী হিসেবে আমাদের সামনে সব সময়ই তুলে ধরা হয় পশ্চিমা নারীদেরকে। কিছুদিন আগে ‘ইভটিজিং’ নিয়ে একটি আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা বলছিলেন, “পশ্চিমা বিশ্বের নারীরা খাদিজা বা আয়শাকে ফলো করে না বলেই তারা এত এগিয়ে গেছে।” তার ভাষ্য, বাংলাদেশের নারী সমাজকেও পশ্চিমাদের মত হতে হবে। বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ সর্বদাই পশ্চিমাদের প্রেমে অন্ধ। তাই তারা সুযোগ পেলেই পশ্চিমাদের জীবনাদর্শ আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। আর আমরাও এতটা চিন্তাশূণ্য হয়ে গেছি যে তাদের কথাগুলো বিনাবাক্যে মেনে নিচ্ছি। কোন প্রশ্ন করছি না।
খাদিজা (রা.) বা আয়শা (রা.) এর মত মহীয়সী নারীদের ফলো না করে পশ্চিমারা বা বাংলাদেশের নারীরা আসলে কতটুকু এগিয়েছে? পুরুষের সাথে অবাধে মেলাশো করা কিংবা শরীর দেখানো পোশাক পরার নামই কি এগিয়ে যাওয়া? পুরুষের মত হতে যেয়ে বাচ্চাদেরকে ‘চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে’ কিংবা ‘সেভ হোমে’ পাঠিয়ে সংসার ধর্ম ত্যাগ করার নামই কি অগ্রগামিতা? এতসব করেও নারীরা কি পাচ্ছে? সমাজ কি পাচ্ছে?
বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মিনিটে প্রায় দুইটি করে নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়। যুক্তরাজ্যেরও একই অবস্থা। উভয় দেশের সবচেয়ে ক্ষমতায়িত নারীরাও ধর্ষণ এড়াতে পারছেন না। তাইতো সে সকল রাষ্ট্রে সেনাবাহিনীতে থাকা নারীদেরও গণ্য করা হয় স্রেফ যৌন বস্তু হিসেবে। কিছেুদিন আগে বিবিসি খবর প্রকাশ করেছিল, যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনীতে নারী ধর্ষণ একটি মামুলি ঘটনা!
অন্যদিকে, অবাধ স্বাধীন বলগাহীন জীবন তাদের সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে পশ্চিমা শিশুগুলো যেহেতু মাতৃস্নেহ ও পারিবারিক কালচার খুব একটা পায় না তাই তারা একটু বড় হতেই মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭০ ভাগ যুবক মাদকাসক্ত। Center on Addiction and Substance Abuse (CASA) ২০১১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরণের নেশায় আসক্ত।
আজকে আমাদের নারীরাও পশ্চিমাদের অনুকরণ করায় সমাজে যেমন তারা সম্মান পাচ্ছে না, গণ্য হচ্ছে ভোগ্য পণ্য হিসেবে তেমনি পারিবারিক ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটছে যা সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে।
তাই প্রকৃত স্মার্ট নারীরা নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন যে, তারা কাকে ফলো করবেন। যেখানে পশ্চিমা অনেক অমুসলিম নারীরা দল বেধে ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করছে। ফলো করছেন খাদিজা (রা.) ও আয়শা (রা.) এর মত মুসলিম মহীয়সী নারীদের। সেখানে আমরা আর কতকাল বিভ্রান্ত থাকবো?
আমরা যদি উম্মুল মু’মিনুন হযরত খাদিজা (রা.) এর দিকে তাকাই তাহলে আমরা এমন এক সত্ত্বাকে অবলোকন করতে পারি যার আদর্শ কোন যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সকল যুগের নারীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ তিনি। যাকে ফলো করে পথভ্রষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
প্রাক-ইসলামি মক্কী সমাজে নারীদের তেমন কোন সামাজিক মর্যাদা ছিলনা। সেই সময়ে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি আর পরিশ্রম দ্বারা প্রতিকুল পরিবেশে তিনি সম্মানিত মহিলার স্থান অর্জন করেছিলেন এবং চরম অশ্লীলতায় ভেসে যাওয়া সমাজে তাঁর শালীনতা বোধ রক্ষা করে তাহিরা উপনামে খ্যাত হয়েছিলেন এবং ব্যবসায়িক জ্ঞানের দ্বারা বিশাল বাণিজ্য পরিচালক হিসাবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। ধীশক্তি আর সৌন্দর্যে, দৃঢ় চরিত্র এবং নরম হৃদয়ের সম্মিলন ছিলেন এই মহীয়সী, এই সমস্ত সকল গুণরাজি তাকে দিয়েছিল সূক্ষ্ম জ্ঞান এবং মানুষ আর ঘটনাকে বিচার করার পরিপক্ব ক্ষমতা।
খাদিজা(রাঃ) আমাদের মা, তিনি আমাদের আদর্শ। তিনি ছিলেন তৎকালীন মক্কা নগরের অন্যতম ধনাঢ্য মহিলা। তাঁর এই ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব ছাড়াও তাঁর আর এক পরিচিতি ছিল- তিনি ইসলাম পূর্ব আরবে পৌত্তলিকতায় ভেসে যাওয়া সময়ে কখনও স্বজাতি আরও দশজনের মত মূর্তিপূজা করেন নাই। আজকের যুগে অনেক মুসলিম নারীকেই দেখি সমাজের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। চিন্তা-ভাবনা না করেই বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে মেতে উঠছে যা তার বিশ্বাস তথা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ চিন্তাহীনভাবে এসব কাজ করা কখনোই কোন বুদ্ধিমান ও আত্মপরিচয় সম্পন্ন নারী বা ব্যক্তির কাজ হতে পারে না।
মা খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.) এর প্রথম স্ত্রী। তার ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তানদেরকে তিনি দিয়েছিলেন সর্বোত্তম শিক্ষা। তার সন্তানেরাও তার মত এক একটি নক্ষত্র। যাদের আলোয় পৃথিবী আলোকময়। অন্যদিকে মা খাদিজা (রা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নারী যিনি তার স্বামীকে যেমন সম্মান করেছেন তেমনি স্বামীর সুখে-দুঃথে তার (সা.) একনিষ্ঠ সঙ্গিনী হিসেবে পাশে থেকেছেন।
মা খাদিজা (রা.) ইসলামে আসার পূর্ব থেকেই ছিলেন সৎ গুণে গুণান্বিত। আর ইসলামে আসার পরে তো তার সততার কথা বলাই বাহুল্য। তিনি কোন অন্যায় কথা বা কাজ হতে দেখলে সব সময়ই তার প্রতিবাদ করতেন। কেননা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা একজন মুসলিম নর ও নারী উভয়ের জন্যই ফরয তথা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়াও তিনি (রা.) তার আশেপাশের অন্যান্য নারীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। অজ্ঞতা-মূর্খতা থেকে বের হয়ে মানুষকে ‘এক আল্লাহর’ দাসত্ব করতে বলতেন।
আজকের মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নারীরা যদি মা খাদিজা (রা.) কে অনুসরণ করেন তাহলে তারা আনস্মার্ট হয়ে যাবেন না। বরং এটিই প্রকৃত স্মার্টনেস। আল্লাহ মনোনীত মহীয়সী নারীদের ফলো না করে পশ্চিমা পশুসুলভ চরিত্রের অধিকারী নারীদের ফলো করার মধ্যে রয়েছে কেবল মূর্খতা। যদি সকল নারীরা মা খাদিজা (রা.) কে ফলো করেন তবে এই সমাজের ও বিশ্বের দৃশ্যপটই পাল্টে যাবে। যা বয়ে আনবে দুনিয়াবি ও আখিরাতের বরকত।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর