ডেস্ক নিউজ : দরিদ্রদের জন্য জীবন উৎসর্গ করা পাকিস্তানের প্রখ্যাত সমাজসেবী আব্দুল সাত্তার ইদি ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন।
শুক্রবার রাতে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইদির পরিবারের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, করাচির এক মেডিকেল সেন্টারে তিনি মারা গেছেন। গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
যুবক বয়সেই ইদি সমাজসেবার কাজ শুরু করেছিলেন। তার নামে প্রতিষ্ঠিত ইদি ফাউন্ডেশন এখন বিশাল এক সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, এতিমখানা, বৃদ্ধনিবাস, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র, স্কুল ও হাসপাতাল পরিচালনা করে থাকে।
তার মৃত্যুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ‘বেহেশতের সেরা জায়গায়’ যেন ইদির স্থান হয় সেই কামনা করে তিনি প্রার্থনা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মানবতার মহান এক সেবককে হারালাম আমরা। তিনি সামাজিকভাবে ভঙ্গুর, অভুক্ত, অসহায় ও দরিদ্রদের কাছে ভালবাসার মূর্ত প্রতীক ছিলেন।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাই ইদিকে ‘কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব’ বলে বর্ণনা করেছেন।
বিবিসিকে মালালা বলেন, ‘তিনি অন্যদের জীবন ও সুখের জন্য জীবনভর কাজ করেছেন, তাই তিনি রোল মডেল। তার মতো কাউকে দেখিনি আমি।’
ইদিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
ভারতের গুজরাটের এক বণিক পরিবারের সন্তান ইদি ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু নিজের অসুস্থ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা’র দেখাশোনা করতে রাষ্ট্র কীভাবে ব্যর্থ হল, তা দেখে তিনি জীবনভর সমাজসেবা করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৫১ সালে তিনি প্রথম ক্লিনিক খোলেন। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইদি ফাউন্ডেশন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনে পরিণত হয়। সংগঠনটি পাকিস্তানজুড়ে স্কুল, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পরিচালনা করে থাকে।
কখনো কখনো রাষ্ট্র যেসব সেবা দিতে ব্যর্থ হয় সেগুলোও দিয়ে থাকে এই ইদি ফাউন্ডেশন।
বিসিবির পাকিস্তান প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ইদি পাকিস্তানের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং অনেকেই তাকে সাক্ষাৎ দেবদূত জ্ঞান করত।
২০১৪ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইদি জানিয়েছিলেন, সাধারণ জীবনযাপন, সততা, কঠোর পরিশ্রম ও সময়ানুবর্তিতা তার কাজের মূল বিষয়।
তিনি বলেছিলেন, ‘অন্যদের সেবা করা প্রত্যেকের কর্তব্য, মানুষের জীবনের অর্থও তাই। বেশি বেশি মানুষ এমনভাবে চিন্তা করতে শুরু করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
সাধারণ জীবনযাপনের জন্যও তিনি পরিচিত ছিলেন। জানামতে তার মাত্র দুইপ্রস্থ পোশাক ছিল। ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের পাশে একটি ছোট ও প্রায় আসবাবপত্রহীন ঘরে তিনি বসবাস করতেন।
২০১৩ সালে তার কিডনি অকেজো হয়ে যায়। বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের সরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর /ওএস