শাহনাজ শারমীন : কোনো নতুন খবর আছে নাকি? বিয়ের পর নতুন বউকে এ কথা জিজ্ঞেস করে থাকেন অনেকেই। এতে কোনো লজ্জাবোধ না থাকলেও ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলতে লজ্জার যেন শেষ নেই। তাছাড়া এ মাসিক নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কারও৷
লজ্জা আর কুসংস্কারে আমরা আমাদের শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলি।
আমাদের এই লজ্জা আর কুসংস্কার ভাঙতে প্রয়োজন ডাক্তার পুরুষ হোক বা মহিলা হোক তাদের সাথে সমস্যার কথা পরামর্শ করা। প্রয়োজন একজন আরেক জনকে বলা, যেন সমস্যার সমাধানটি বের হয়ে আসে। আমাদের অনেকের আবার বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না স্বভাব রয়েছে! তাই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
চুল ধোয়া
ঋতুস্রাব হলে বলা হয়, মেয়েদের দু’দিন চুল ধোয়া উচিত নয়। এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং চিকিৎসকরা বলে থাকেন মাথায় পানি দিলে মাসিকের ব্যথা অনেকটা কমে এবং এতে আরাম পাওয়া যায়৷
মাসিকের দিনে সাঁতার
আগেরকার দিনে পুকুরে গোসল করতো অনেকেই। তাই হয়ত পানি নোংরা হওয়ার ভয়ে এ নিয়ম চালু হয়েছিল, মাসিক হলে গোসল করা যাবে না। কিন্তু এখনকার গোসলখানায় সে ধরনের কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি ট্যাম্পন পরে অনেকে সাঁতারও কাটে এ সময়ে।
অচ্ছুৎ ও অভিশপ্ত
মাসিকের চারদিন মেয়েদের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়, যেন তারা অচ্ছুৎ এবং অভিশপ্ত। তাদের গাছে পানিও দিতে দেয়া হয় না। আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা, তাদের দেয়া পানিতে গাছ নাকি মরে যাবে।
মসলাযুক্ত খাবার
মাসিকের সময় হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে। মসলাযুক্ত খাবার তাই না খাওয়া ভালো। কিন্তু অনেক বাড়িতে আচার ছুঁতে দেয়া হয় না মেয়েদের, এতে নাকি আচারও নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি আচার খেতেও দেয়া হয় না তাদের।
যৌন সম্পর্ক নয়
মাসিক চলাকালীন মেয়েদের শরীর কিছুটা দুর্বল থাকে। অনেকের খুব ব্যথা হয়। তাই এ সময়ে মেয়েদের বিশ্রাম করা দরকার। ধর্মীয় আইনেও এ সময়ে মিলনকে হারাম করা হয়েছে। স্বামীর উচিত স্ত্রীকে এ সময় বিশ্রাম দেয়া ও যত্ন নেয়া, যাতে তার কাজের চাপ বেশি না হয়।
রান্নাঘরে ঢুকতে মানা
অনেক হিন্দু পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের রান্না ঘরে ঢুকতে দেয়া হয় না। বিশেষ করে বড় পরিবারে এ ধরনের কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়, তারা মনে করে এতে খাবার দূষিত হয়। এই ধারণা একেবারেই ভুল৷
বিছানায় শুতে না দেয়া
অনেক পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের বিছানায় শুতে দেয়া হয় না। মাটিতে শুতে বলা হয়৷ কোনো কোনো পরিবারে তো ঘরে নয়, বরং বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় শুতে দেয়া হয় তাদের৷ অথচ এতে যে ঐ মেয়েটির কষ্ট আরো বেড়ে যায়, তা কেউই লক্ষ্য করে না।
নাপাক রক্ত!
অনেকেই বলে থাকেন, মাসিকের রক্ত নাপাক, মানে অপবিত্র। তাদের ধারণা এই রক্ত দিয়ে জাদু, ঝাড়ফুকও করা যায়। আশ্চর্যের বিষয়, শুধুমাত্র অশিক্ষিত পরিবারে নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এ ধারণা প্রচলিত আছে। অতএব, আমাদের আজকের উত্তরাধিকার এ যুগে এসব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
আরও পড়ুন : ফজর নামায কাযা হওয়া থেকে বাঁচতে ৪ পরামর্শ