নাঈমা তামান্না : টেলিভিশন। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে মুহূর্তেই পৌঁছে দেয় সংবাদ।তাই বলে সারাদিন বসে বসে খবর দেখে কে? নারীরা তো সারাদিনই পড়ে থাকে নাটক সিনেমা সিরিয়ালে। এদের কাছে টিভি মানেই তো এই।
আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না নীরবে এসব নাটক সিরিয়াল কী ক্ষতি করছে। তবে গবেষকরা এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন। সাম্প্রতিক বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে টিভি দেখার নেতিবাচক কিছু ফলাফল। এ কারণে অধিকাংশ বিশ্লেষকরাই টিভি আসক্তি থেকে মানুষকে বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন।
আসুন জেনে নেয়া যাক টিভি নামের ছোট্ট এই বাক্স আমাদের গোপনে কী কী ক্ষতি করছে।
সংসারে অশান্তির কারণ
আমাদের ব্যক্তি জীবনে পারিবারিক কলহ এখন চরমে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে দূরত্ব। বিশেষজ্ঞদের মত, এসবের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হতে পারে নাটক সিরিয়াল। কারণ এগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে দুষ্টুমির ছলে যে ম্যাসেজ দেয়া হয় তা বড়ই ভয়ঙ্কর।
দেখা যায় বিষয়গুলো কেবলই অভিনয়, কিন্তু দর্শক এটাকেই বাস্তব ভেবে নিজের জীবনেও প্রয়োগ করছেন। ফলে চাহিদা ও প্রাপ্তির গরমিল হয়ে যাচ্ছে সহজেই। এখান থেকেই তৈরি হচ্ছে সংসারের বড় রকমের অশান্তি। মনের ভেতর দানা বাঁধে সন্দেহ।
হিংস্র হতে শেখায়
হ্যা এটিও এক ভয়ঙ্কর দিক। টিভি সিনেমা অজান্তেই দর্শককে হিংস্র করে তুলতে সাহায্য করে। এটি মূলত ভেতরে ভেতরে তৈরি হতে থাকে দৃশ্যগুলো দেখার পর। অপ্রাপ্তির রিএ্যাকশনগুলো খুব কঠিন করে দেখানো হয় টিভি সিনেমায়। আত্মহত্যার ফরমুলাও শিক্ষা দেয় এসব সিরিয়াল।
যার ফলে এর দর্শক ধীরে ধীরেই হয়ে উঠে হিংস্র। তখন সে আশপাশের মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করতে থাকে। অতীতের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে টিভি সিনেমার দর্শকদের অধিকাংশ হিংস্র হয়ে উঠে সিনেমার দৃশ্যগুলো দেখার কারণে। ব্যক্তির ভেতর চতুরতা, চক্রন্ত এ বিষয়গুলোও খুব সহজেই ঢুকে পড়ে।
কার্টুনে আক্রান্ত শিশুরা
বাসায় টিভি থাকার কারণে বাচ্চারা দ্রুত কার্টুন আসক্ত হয়ে পড়ে। বাসায় থাকা বেশিরভাগ সময়ই সে টিভির পেছনে দেয়ার চেষ্টা করে। এর থেকে তাকে ফেরানো যায় না। অথচ শিশুর এই কার্টুনে আসক্তির ফলে বাহ্যিক ক্ষতি ছাড়াও আছে অনেক শারীরিক সমস্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কার্টুন দেখার ফলে শিশুদের আচার আচরণে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। অনেক সময় এরা সহিংস আচরণ করে।
এছাড়াও বেশি কার্টুন দেখে বাচ্চারা শারীরিক ও মানসিক নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে রাতে বাচ্চারা অনিয়মিত ঘুমের চক্রে পড়ে যায়। এছাড়াও দুঃস্বপ্ন দেখে বেশি। অনেক সময় দেখা যায় ঘুমের ভেতরও কার্টুনের কথাগুলো আওড়াতে থাকে। ধীরে ধীরে যা বাচ্চার ব্রেনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ প্রধান গবেষক ডঃ দমিত্রি ক্রিসটাকিস বলেছেন, টিভি শিশুদের মনে অস্বাভাবিক মাত্রার উদ্দীপনা তৈরি করে। টিভির সামনে টানা একঘণ্টা থাকলে বাচ্চার এট্যানশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডার হবার সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।
জীবন তুচ্ছ হতে থাকে
টিভির কারণে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুবসমাজ। এরা ধীরে ধীরে কোণঠাসা প্রাণী হয়ে যায়। জীবনকে নাটক সিনেমার মত সহজলভ্য ভেবে বরবাদ করে নিজেদের ফিউচার।
নাটকের এইসব নাটকীয়তা বাস্তব জীবনে এনে অশান্তির সৃষ্টি করে। যুবকদের পরালেখার ক্ষতি তো হয়ই, জীবনটাকেও একপেশে করে তোলে। একগুয়েমি ভর করে। একা একা সিদ্ধান্ত নিতে সে আর দ্বীধা করে না।
এসব কারণে অবশ্যই আপনার ঘরকে টিভিমুক্ত রাখা উচিত। জীবনে বিনোদনের প্রয়োজন আছে, আছে অবসর কাটানোর, তাই বলে অশ্লীলতা, প্রকাশ্য ক্ষতির কারণ এমন জিনিসে ডুবে থাকা আদৌ উচিত নয়। আসুন বিষয়গুলো মেনে চলি। জীবনে প্রশান্তি আসবে ইনশাআল্লাহ।
আরআর