আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার তরুণী হানিফা আদম। মুসলিম পরিবারেই জন্ম। তবে ধার্মিক ছিলেন না। মূলত একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। পুতুল ডিজাইন করতেন। সেই থেকে ধারণা এল হিজাব বা হিজাবী পোশাক তৈরি করবেন। যা থেকে উপকৃত হবে নারীরা। ভাবনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করলে হানিফা। অল্প দিনের মধ্যেই তার পোশাকগুলো মানুষের কাছে পছন্দনীয় হলো। ইনস্টাগ্রামে প্রচুর সারা পেলেন। নিয়মিত হলো হিজাবী পোশাক তৈরি।
বর্তমানে নাইজেরিয়াতে তার তৈরি হিজাব ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে আইডল মেনে নারীরা হিজাব ধরতে শুরু করেছে। নাইজেরিয়ানরা মনে করেন এটি হানিফার এক অন্যরকম বিপ্লব।
মুসলিম ম্যাটারস ম্যাগাজিন থেকে তার সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন জাকারিয়া হারুন
আপনার শৈশব সম্পর্কে আমাদের কিছু বলেন, আপনার জাতীয়তা, আপনার পারিবারিক পটভূমি, কোথায় বেড়ে উঠেছেন?
আমার নাম হানিফা আদম। আমি নাইজেরিয়ান। আমি মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছি। আমি নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহণ করি। আমি মাস্টার্স ডিগ্রি কবেন্টি ইউনিভার্সিটি ইউ.কে থেকে পাশ করি। বেড়ে ওঠেছি ইলোরিন। আর বর্তমানে নাইজেরিয়াতেই বসবাস করছি।
শৈশবে আপনার আশা, সপ্ন কি ছিলো? এবং শৈশব কিভাবে কাটিয়েছেন?
শৈশবের প্রত্যেকদিনের ঘটনা-দুর্ঘটনা, আমার দিনলিপিতে লিখে রেখেছি। আমি সব সময় পড়ালেখায় সময় পার করতাম। শৈশবে পড়ালেখা ছাড়া আর কোল আশা ছিলো না। আর অবসর সময়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে, নিবৃত্তে বসে ছবি আঁকতাম। আমার বাবা মা আমাকে অনেক সার্পোট দিয়েছে। তারা আমাকে সব সময় ভালো কাজের পরামর্শ দিতো।
কখন থেকে আপনার হিজাবী পোশাক তৈরির ধারণা আসে? এর পিছনে আপনাকে কে উৎসাহিত করেছে?
আমার এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যখন থেকে আমি পুতুলের পোশাক তৈরি করি। তখন থেকে আমি এ প্রার্থনা ও সিদ্ধান্ত নেই। আমি একজন মুসলিম হিসেবে নিজেই উৎসাহিত হই হিজাবী পোশাক তৈরির জন্য। আমি শৈশবে ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবিনি, হিজাবি পোশাক তৈরি করব আর তার এতো প্রচলন হবে।
হিজাব আপনার নিজের জীবনকে কিভাবে রূপায়িত করেছে? হিজাবী পোশাক নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
আমি হিজাব পরিধান করি শৈশব থেকে। আমি এ বিষয়টা ভালোভাবে বুঝেছিলাম হিজাবের মাধ্যমেই আমার আত্মিক প্রশান্তি। আমি সামাজিক মাধ্যমে হিজাবী পোশাক প্রকাশ করতাম। স্বভাবিকভাবেই মানুষ এর প্রতি উৎসাহী ছিল। কারণ আমার বিশ্বাস, নারীর গোটা জীবনে হিজাব কল্যাণকর প্রভাব ফেলে।
হিজাবী পোশাক তৈরিতে আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ্ঞ কী? সে চ্যালেন্জ্ঞ আপনি কিভাবে মোকাবেলা করেন?
আমি হিজাবী পোশাক নিয়ে কাজ করি, এটা অনেকেই চায়নি। বিশেষ করে সমাজের কর্তৃত্ববান কথিত প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ। আল্লাহর রহমতে আমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি। ধীরে ধীরে সব চ্যালেঞ্জ আমার অনুকূলে হয়ে গেছে।
টুইটার থেকে জানা গেছে আপনি একজন ব্লগার এবং একজন সুদক্ষ মিডিকেল বিজ্ঞানী। আমাদের এর পটভূমি বলুন?
অমার ব্লগের নাম muslimahanie.com সেখানে আমি আমার জীবন বৃত্তান্ত সাজিয়ে রেখেছি। ব্লগে লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। কারণ অনেক মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারে। আর মেডিকেলে কাজ করে আমি জনসেবার কাজ করি। মানুষের জন্য কাজ করতে আমার ভেতর পুলকিত হয়। মোটকথা কাজ করতে আমি অনেক আনন্দবোধ করি।
আপনার হিজাবী পোশাক অমুসলিমরা পড়ে? হিজাব বিরোধীদের ধারণা সম্পর্কে বলেন?
আমি গভীরভাবে অনুভব করি, হিজাব প্রত্যেকটি নারীর ভূষণ ও বাচ্ঞনীয়। সে যে ধর্মেরই হোক। কেননা হিজাব অন্যের মন্দ ধারণা থেকে রক্ষা করে। আর যারা হিজাবের বিরোধী তারা নারীর শত্রু। তাদের সম্পর্কে বলব-ইসলাম সন্ত্রাসবাদ ঘৃণা করে। যারা হিজাব পরে সন্ত্রাসবাদ চালায়, তারা মূলত এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী। হিজাবী পোশাককে কলুষিত করার জন্য এ সব করে।
আপনার কাজ সম্পর্কে কোথায় কিভাবে আমরা আরো বেশি জানতে পারবো? এবং আমরা কিভাবে আপনার হিজাব কিনতে পারবো?
ইনশাল্লাহ, আমরা অচিরেই আমাদের ওয়েব সাইট খুলব। এখন আমাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন instagram page পেজে থেকে। আমার জন্য দোয়া করবেন এবং এ দোয়া ও করবেন পুরো মুসলিম বিশ্বের নারীরা যেন হিজাবী হয়।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর