শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ধারাবাহিক উপন্যাস : অশুদ্ধ পুরুষ (২)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

monir copyমনির প্রধান : ফারহি, ঘুমাসনি?
ফারহি কোনো উত্তর না দিয়ে লুবনার গা ঘেঁষে বিছানায় বসে।
কিছু বলবি ফারহি?
আপা, বাবা আজও মাকে মেরেছে।
জানি।
আমার কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আপা।
ফারহি, যা ঘুমা। রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে। কাল সকালে কথা বলবো, যা।

একটা স্পষ্ট দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ফারহি উঠে দাঁড়ায়। মন্থর গতিতে বেরিয়ে যায় লুবনার ঘর থেকে। লুবনার বড় মায়া হয় ফারহির জন্য। লক্ষ্মী বোনটা তার দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছুই এখন বোঝে। হয়তো নিজের বিছানায় কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলবে এখন। তার খুব ইচ্ছে করে ফারহিকে ডেকে একটু বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এই বয়সের মেয়েরা সামান্য আদর পেলেই গলে পড়ে যায়। দু’একটা ভালোবাসার কথা অথবা কটু কথায় নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। তার নিজেরও এমন সময় গিয়েছে। বড় কষ্টের সময়। বড় জঘন্য সময়।
মোবাইলে টুট টুট শব্দ হয়। রাশেদ এসএমএস করেছে একটা। ‘উইনডোটা খুলে দেখো, চাঁদটা ঠিক তোমার মতো।’ ছোট্ট দু’লাইন লেখা। এর মধ্যেই যেন একদল ভালো লাগার, একদল ভালোবাসার বাক্য মিশে গেছে অনায়াসে। রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে হয় লুবনার। আবার ইচ্ছে হয় না। মার কথা মনে পড়ে। মা বোধহয় কাঁদছে। এমন একটি মুহূর্তে প্রেমিক পুরুষের সাথে রোমান্টিক এসএমএস চালাচালি করা খুব অন্যায়। তবু কেন যেন হৃদয়ের খুব গভীরে কোথাও এই অন্যায়ের বাঁধটা ভাঙতে ইচ্ছে হয়। নিজ নিজ সুখের, নিজ নিজ ভালোমন্দের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা মানুষই বোধহয় একটু হলওে স্বার্থপর।

লুবনার একবার ইচ্ছে হয় মার ঘরে উঁকি দিতে। ‘কেঁদো না মা, তোমার মতো লক্ষ্মী মেয়ে এই পৃথিবীতে আর একটাও নেই।’ এমন কিছু কথা মায়ের কাঁধ ছুঁয়ে বললে মা হয়তো কান্না বন্ধ করবে। অথবা হতে পারে আরো বেশি ডুকরে উঠবে কান্নায়। ঘরের বাতি জ্বালিয়ে আবার তা বন্ধ করে দেয় লুবনা। মার ঘরে যাওয়া এখন উচিত হবে না বোধহয়। মা লজ্জা পেতে পারে। মার ধারণা কুৎসিত ব্যাপারটা সম্পর্কে তারা দু’বোন কেউ কিছু জানে না। তুমি কি জানো মা, কী কান্না আমরা দু’বোন তোমার জন্য কাঁদি।

রওশন আরার ইচ্ছে হয় খানিকক্ষণ ছাদে গিয়ে হাঁটতে। খুব যখন মন খারাপ হয় তখন বিচিত্র সব ভাবনা চিন্তা মনে আসে। খুব সাধারণ জিনিসকেও অন্যরকম লাগে। পরিচিত কোনো সাধারণ গান বারবার শুনলেও মন ভরে না। একবার রওশন আরা হাবিবের চন্দ্রগ্রহণ গানটা ষোলবার শুনেছিলেন। আরও শোনার ইচ্ছে ছিল। বাথরুমের চাপ এলো। বাথরুমের চাপ কি মনের ইচ্ছা অনিচ্ছার ভাষা বোঝে? তার ভাষা একটাইÑবদনা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি।

রওশন আরা বিছানার নিচ থেকে ট্যাবলেটের পাতাটা বের করেন। স্লিপিং পিল। মিট্রাস পনের মিলি। হেভি পাওয়ারফুল। মরে যাওয়ার জন্য পাঁচ সাতটা খাওয়াই যথেষ্ট। বিশ বাইশটার প্রয়োজন নেই। ফার্মাসিয়ান পরিচিত বলেই প্রেসক্রিপশন ছাড়া সম্ভব হয়েছে আনা। নইলে প্রেসক্রিপশন ছাড়া আজকাল ঘুমের ওষুধ কেউ বিক্রি করে না।

সুইসাইডের জন্য স্লিপিং পিলই বোধহয় সবচেয়ে নিরাপদ এবং আরামদায়ক। ঘুমের ভেতরেই ঝামেলাহীন মৃত্যু। কষ্ট নেই। যন্ত্রণা নেই। আগের দিনে মানুষরা বিষ, ফোরাডন খেতো। খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মুখ দিয়ে ফেনার মতো বেরুতো। হাসপাতাল, দৌড়াদৌড়ি, নাক দিয়ে নল ঢোকানো। বড় লজ্জাজনক অবস্থা। কেউ কেউ ফাঁস নিত গলায়। সেই মৃত্যু কি কম যন্ত্রণার! একবার দুই পাড়ার পরের পাড়ায় ফাঁস নিয়ে মরা এক মেয়েকে দেখতে গিয়েছিল তারা দল বেঁধে। কী বিভৎস! মৃত দেহের মুখ ফুলে গিয়ে বিশাল আকৃতির রূপ নিয়েছে। জিহ্বা কালি দেবীর মতো ঝুলে পড়েছে বাম দিকে। প্রায় বেরিয়ে আসা চোখের মনি দুটো টকটকে লাল হয়ে ছিল রক্তের মতো।

এক পাতা ঘুমের বড়ি সবকিছুর চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ। ঘুমের মধ্যেই জীবনের সব যন্ত্রণার অবসান হবে। কিন্তু সুইসাইডের জন্য অনেক বেশি সাহসের প্রয়োজন। তার চেয়েও বড় কথা ধর্মীয় বিধি নিষেধের ব্যাপার আছে। তবু রওশনের মনে হয় তার সাহস খানিকটা কম। বুদ্ধিমান মানুষেরা কখনো খুব বেশি সাহসী হয় না।
বাবা,
সাইফুলের কাছে প্রথম শুনি আপনি অসুস্থ। স্কুলে ছিলাম। চারপাশে বাচ্চাদের দারুণ হৈ চৈ হচ্ছিল। সাইফুলের কথা বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারিনি। আর সেও খবরটা জানিয়েছে সাদামাঠা ভাবে। যেন জানাতে হয় বলেই ফোন করা উচিত ছিল। শুধু দায়িত্ব পালন।
স্কুল থেকে ফিরে মাকে ফোন করে জানলাম আপনার শরীর বেশ খারাপ। কয়েকদিন থেকে খেতে পারছেন না। শুনে অবাক হয়েছি। হ্যাঁ, অবাক যে হওয়ারই কথা। বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কঠিন নিয়ম মেনে চলা আমাদের বাবার কোনোদিন অসুখ-বিসুখ হতে দেখিনি। সামান্য জ্বর-সর্দির কথাও ভাবতে বসলে মনে পড়ে না।

‘কেমন আছেন, আমরাও ভালো আছি কি-না, পর সমাচার কি’, সঙ্গত কারণেই এসব দিয়ে লিখতে শুরু করিনি। আপনি অসুস্থ, ভালো নেই। এটা তো জানা কথা। আর আমি কিংবা আমরা?

আচ্ছা বাবা বুকে হাত রেখে বলেন তো, এই দীর্ঘ জীবনের প্রত্যেকটা দুপুরে অথবা রাতে আপনি যখন মার সামনে একা খেতে বসেছেন, কোনো একদিনও কি মাকে জিজ্ঞেস করেছেন-তুমি খেয়েছো? অথবা জিজ্ঞেস করেছেন-রওশনের খবরা-খবর কিছু জান? সাইফুলটা আজকাল কী করছে?
আপনি যেমন জানেন, আমরাও সবাই জানি, করেননি। আপনি সমগ্র জীবন কাটিয়েছেন নিজেকে নিয়ে। আমাদের কাউকে নিয়ে আপনার উদ্বেগ ছিল না। অথচ ঘুম থেকে ওঠার পনের মিনিটের মধ্যে টয়লেটের বেগ না পেলে তা নিয়েই আপনি অস্থির হয়েছেন। কঠিন নিয়ম মেনে চলার এই বাড়াবাড়িতে আপনি সুস্থ ছিলেন এবং রোগ ব্যাধি আপনাকে কাবু করতে পারেনি। এই সত্যটুকু অস্বীকার করা যাবে না। আপনার অনেক কিছুর সাথে এই গুণটিও হয়তো আমাদের দু’ভাই-বোনের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছে। সাইফুলের মতো আমারও রোগ ব্যধির বালাই কম। চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছি, এখনো শরীরে বাড়তি মেদটুকু জমেনি। পথে হাঁটার সময় মানুষের চোখ দেখে বুঝতে পারি, মধ্য বয়সে পা রাখলেও সুস্থতায়, দেহের মাংস মজ্জায় আমি বোধহয় এখনো যথেষ্ট সুন্দরী।

শুনেছি গালে, ঠোটের কোণে ছোট তিল নিয়ে যে সমস্ত মেয়েরা জন্মে তারা সৌভাগ্যবতী হয়। আয়নায় নিজেকে দেখলে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। মুখে ছড়িয়ে বসা গুটি গুটি তিলগুলোর দিকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চেয়ে থাকি। এগুলো মুখের আদলটাকে মোহনীয় করা ব্যতিত কোনো সৌভাগ্য আমার জন্য বয়ে আনতে পারেনি।

আপনাদের জামাই করে কি জানেন, রাতের বিছানায় আচমকাই কোনো একটা তিলের ওপর ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, এই জায়গাটুকুর দাম কোটি টাকার চেয়ে কম নয়। আমার অসহ্য বোধ হয়। কী বাবা, মেয়ের এমন সব কথায় লজ্জা পাচ্ছেন?
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝেই বা বলি কেন, সব সময় ইচ্ছে করে, এর চেয়ে বড় লজ্জা, এর চেয়েও লজ্জাকর অপমান দিয়ে আপনাকে ভরিয়ে দেই। আচ্ছা থাক এসব কথা।

আয়নায় নিজেকে দেখলে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। মুখে ছড়িয়ে বসা গুটি গুটি তিলগুলোর দিকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চেয়ে থাকি। এগুলো মুখের আদলটাকে মোহনীয় করা ব্যতিত কোনো সৌভাগ্য আমার জন্য বয়ে আনতে পারেনি।

এই বৃদ্ধ বয়সে এসে কী অসুখ বাঁধিয়ে বসলেন বাবা? একদম খেতেই পারছেন না। কোনোদিন যার জ্বর-সর্দি হলো না, হঠাৎ তার এই কাহিল অবস্থা। শুনলে অবাক লাগে।

আজ সকালে আপনাদের জামাইকে বললাম, চলো, বাবাকে গিয়ে দেখে আসি। সে ‘হ্যাঁ, না’ কিছু বলেনি। আমার কাছে এমনও মনে হয়নি সে আমার কথাটাকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। জগতে নিজ চাওয়া পাওয়া ছাড়া বাকি সবকিছু তার কাছে তুচ্ছ। ভাবতে পারেন বাবা, এমন একটা লোকের সঙ্গে ঊনিশ বছর ধরে সংসার করছি। মরে যেতে ইচ্ছে হয়।

স্কুল জীবনের, কলেজ জীবনের অনেক বান্ধবীদের সঙ্গে হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয়। আমি গল্প স্বল্পর পথে না হেঁটে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। কতো সুখে আছে সবাই। একেকজন স্বামী-সন্তান নিয়ে টুকরো টুকরো সুখের স্মৃতিচারণ করে। কারো সুখকে আমি হিংসে করি না। কিন্তু সুখের কথাগুলো শুনতে ইচ্ছে করে না। বুক ফেটে যেতে চায়।

এই যে রাত জেগে আপনাকে লিখছি, আমি নিশ্চিত, আপনাদের জামাই রাগে গজগজ করছে। সে আস্ত একটা কাপুরুষ। এমনিতে বলার সাহস পাবে না, চলো রওশন বাতি নিভিয়ে বিছানায় যাই। যখন আমি বাতি নিভিয়ে দিয়ে শোব, তখন সে এসে পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। ঊনিশ বছরের সংসার জীবনে, বুকের ওপর চমৎকার দুটো মাংসপি- এবং তলপেটের দিকে মসৃণ জায়গাটুকু ছাড়া আলাদা কোনো পরিচয় নিয়ে তার সামনে আমি দাঁড়াতে পারিনি।

এই বাবা, শুনতে লজ্জা লাগে? আমার তো ইচ্ছে হয়-সমস্ত সামাজিকতা ভেঙে, সমস্ত নিয়ম-কানুন পায়ে পিষে আপনাকে রাতে আমাদের বেডরুমে এনে দাঁড় করিয়ে দেই। দেখুন-মাস্টার্স পাস করা নারী নামক মানুষ না হয়ে ওঠা প্রাণীটি একের পর এক কী করে ধর্ষিত হয়।

আমার ছোট মেয়ে সেদিন স্কুল থেকে এসে বলে, মাগো আমার খুব পেট ব্যথা করছে। ফারহির চোখ ভর্তি জল ছিল। পানি ভর্তি পুকুরে সামান্য বাতাসের ছোঁয়ায় পানি যেমন টলমল টলমল করে কাঁপে, আমার মেয়েটার চোখও এমন করে পানিতে টলমল করছিল। আমি তাকে কোলে টেনে বলতে পারিনি, কেন পেট ব্যথা করছে রে মা? গ্যাসের ব্যথা? না উল্টোপাল্টা কিছু খেয়েছিস? মেয়েকে বুকে না টেনে কড়া এক ধমক দিয়েছিলাম। ‘টিফিন পিরিয়ডে কেন চলে এলি স্কুল থেকে? মাথার ওপর পরীক্ষা ঝুলছে!’

ফারহি ভয় এবং বিস্ময়বোধ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ। বন্যার পানি টেনে যাবার মতো তার চোখের পানিও শুকিয়ে গিয়েছিল। এই কথা মনে পড়লে কেমন লাগে বলেন তো বাবা!

ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি কখনো সহজ হতে পারি না। চেষ্টা করলেও পারি না। আর এই সবকিছু আপনার কল্যাণেই। আপনি কোনোদিন আমাদের কারোর সাথে হাসিমুখে একটা কথা বলেছেন বলে মনে পড়ে কি-না ভাবেন তো?

বাবা আপনি কি জানেন, কী ভয়ঙ্কর উম্মাদ টাইপের একজন মানুষ আপনি? শুধু আপনি একা নন। আপনার মতো অনেকেই আছে। যারা মনে করে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে না পারার নামই পরাজয় বরণ। ভাইরাসের মতো এই অশুদ্ধ মানুষগুলো নিজের কথাকে বহাল রাখতে, পারে না এমন কিছু নেই। যেমন আপনি। মি. সাজ্জাদ খন্দকার। আপন গোয়ার্তমির কারণে নিজ ছেলেমেয়েদের জীবন পর্যন্ত ঠেলে দিয়েছেন অশান্তির আগুনে।
আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। সাইফুলটা কী অপরাধ করেছিল? ওর পছন্দ করা মেয়েটার সঙ্গে বিয়ে দিলে জগৎ সংসার কেমন করে অশুদ্ধ হতো সেই ব্যাখ্যা হয়তো আপনার কাছে আছে। তবে আমাদের সবার কাছে তা গাঁজাখুরি উম্মাদনা ছাড়া কিছু নয়। রিটায়ার্ড করার পর থেকে সাইফুলটার ঘাঁড়েই চেপে বসে আছেন। সে চাইলে কি আপনাকে একচোট নিতে পারে না? পারে। হয়তো শ্রদ্ধাবোধ থেকেই নেয় না। এতো কিছুর পরও আপনার মাঝে কোনো অনুতপ্ততা নেই। এটা কি সপ্ত আশ্চর্যের চেয়েও কম কিছু!

সাইফুলটা কী অপরাধ করেছিল? ওর পছন্দ করা মেয়েটার সঙ্গে বিয়ে দিলে জগৎ সংসার কেমন করে অশুদ্ধ হতো সেই ব্যাখ্যা হয়তো আপনার কাছে আছে। তবে আমাদের সবার কাছে তা গাঁজাখুরি উম্মাদনা ছাড়া কিছু নয়। রিটায়ার্ড করার পর থেকে সাইফুলটার ঘাঁড়েই চেপে বসে আছেন। সে চাইলে কি আপনাকে একচোট নিতে পারে না?

ক’দিন আগে সাইফুলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আমি প্রশ্ন করি, সাইফুল কেমন আছিস? সব ভালো তো?
হ্যাঁ আপা, ভালো আছি।
শুনলাম তোর বউ নাকি...
না আপা, ভালোই আছি।
বাবা, সাইফুলের ভালোর মাঝে কতো বড় যে কষ্ট লুকিয়ে আছে তা আমি বুঝি। সব হারিয়ে ফেলা মানুষের সুর যেমন বিষণœ হয়, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন-সাইফুলের সুর দিন দিন তেমন হয়ে উঠছে।

হুট করে এতো সহজেই বাবা আপনি মরে যাবেন এ আমি বিশ্বাস করি না। নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানটা কি শুনেছেন, ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ’? গানে বৃদ্ধ বাবা ছেলের শেষ পরিণতি দেখার অপেক্ষায় বেঁচে থাকতে চায়। আর আমি চাই আপনার শেষ পরিণতি দেখতে। সাইফুলের মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করে-বেশ তো আছি। একটা অপেক্ষা। একটা শেষ পরিণতি দেখার আদিগন্ত আকাঙ্খা। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত। সব মিলিয়ে ভালোই আছি, তাই না বাবা?

চিঠি পড়ে লজ্জায়, ঘৃণায় মুখ বাঁকা করবেন না। বর্ণনার প্রতিটি ভাঁজে প্রতিটি অবয়বে যে কষ্ট, যে হাহাকার, যে যন্ত্রনা লুকিয়ে আছে যদি তার সামান্যও উপলব্ধি করতে পারেন, দেখবেন বেঁচে থাকা কতোটা অসহনীয়।
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
প্রার্থনা করি সুস্থ হয়ে ওঠেন। মঙ্গল কামনা করেই শেষ করলাম। কী করবো বলেন, মেয়ে হয়ে যে জন্মেছি। মেয়ে হয়ে জন্মানোই বুঝি এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় যন্ত্রনার। পুরুষরা কোনোদিন হয়তো এই সত্যটা উপলব্ধি করতে পারবে না।

প্রথম পর্ব : অশুদ্ধ পুরুষ ১

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ