ইফতেখার জামিল : ঘটনাটা গত বছরের।তবে এখনো প্রাসঙ্গিক।রামাদান না রমজান বলা হবে, এ নিয়ে ভারতে তর্ক শুরু হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে উপমহাদেশে রমজান উচ্চারণই প্রচলিত। ফার্সি উচ্চারণ সূত্রে আরবি রামাদান রমজানে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে, ইদানীং, ইন্টারনেট, আরবিভাষী বা আরবে পড়ুয়া শায়খ সূত্রে ইসলাম বুঝাবুঝির কারণে রমজান আবার রামাদানে রূপান্তরিত হচ্ছে।
শুধু রামাদানের ক্ষেত্রেই নয়, আরও নানা শব্দের ক্ষেত্রেই আজকাল এই তর্ক দেখা যায়।সিরাত নাকি সিরাহ, নামাজ নাকি সালাত- আরও কত শব্দ! খালদুনের দোহাইয়ে এই বিষয়কে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়- ফার্সি-ভাষার ক্ষমতা-আসাবিয়াতের কারণে প্রথমে রামাদান রমজানে রূপান্তরিত হয়। পরে, এখন, আরবি ভাষার ধর্ম-আসাবিয়াতের কারণে রমজান রামাদানে রূপান্তরিত হচ্ছে।
এই ব্যাখ্যায় তর্কটা যত সহজ মনে হচ্ছে, আদতে কিন্তু বিষয়টা অত সহজ নয়। কেন? আসাবিয়াত, প্রাকৃতিক বিষয়। সমাজে যদি বিশেষ কোন ক্ষমতা বা ধর্ম-চিন্তা হাজির থাকে, তাহলে, স্বাভাবিকভাবেই সে ক্ষমতা ও চিন্তার ভাষা ও চিহ্ন প্রভাবশালী হয়ে উঠে। কিন্তু মুশকিল হল, অনেক সময় ক্ষমতা বা চিন্তা নিজস্ব ভাষা ও চিহ্নকে অপরের উপর চাপিয়ে দেয়- এতে সমাজে পৌত্তলিকতা শুরু হয়। এবং জুলুমের শর্ত তৈয়ার হয়। কেন? ক্ষমতা ও চিন্তার দায়িত্ব, যথাক্রমে, মানব সমাজকে পরিচালনা করা ও মারেফাত দান করা। কিন্তু ক্ষমতা বা চিন্তা যখন সার্বভৌম হয়ে উঠে তখন প্রকৃতির সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, ন্যায়, ইনসাফ ও সাম্য সাধারণ থাকে না, বিশেষে পরিণত হয়। ধরেন, আপনি বাঙালি বা মুসলমান, এই সূত্রে সব সুযোগ পাইবেন আর সবাইরে আপনে জুলুম করতে পারবেন, এই যে বিশেষ হয়ে যাচ্ছে।
ফার্সি-ভাষার ক্ষমতা-আসাবিয়াতের কারণে প্রথমে রামাদান রমজানে রূপান্তরিত হয়। পরে, এখন, আরবি ভাষার ধর্ম-আসাবিয়াতের কারণে রমজান রামাদানে রূপান্তরিত হচ্ছে।
ভারতে তর্কটা সালাফি ইসলাম ও আধুনিক ভাষার মধ্যে চলছে। উভয়ের মধ্যেই সমস্যা আছে- অপরকে নাকচ করে। আধুনিক ভাষা নিজের বাইরের ভাষার অন্যরূপকে ক্ষেত, অপ্রমিত ও অশুদ্ধ বইলা গালি দেয়। খেয়াল করেন, কলকাতার বইয়ের ভাষাই এখন বাংলার প্রমিত ও শুদ্ধ ভাষা। এর বাইরে যাওয়া হারাম। ফলে আধুনিক ভাষা যেহেতু রমজানকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সে কারণে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে রমজান রামাদান হইলে তার সম্মানে লাগে। সমাজে দুইটা উচ্চারণ থাকতে পারে- এইটা সে মানতে নারাজ!
আবার সালাফি ইসলামও যখন ইসলাম শিখাইতে যায়, তখন ভাষা ও চিহ্নকেই ধর্ম আকারে নিশান দিয়ে দেয়। এই অঞ্চলে আলেম-ছুফিদের কিন্তু কখনই আঞ্চলিকতার সমস্যায় পড়তে হয় নাই, এই অঞ্চলকে তারা অস্বীকার করেন নাই আবার নির্দিষ্ট আঞ্চলিক রুপকে ইসলাম আকারে হাজির করেন নাই। সালাফি ইসলাম এইটা মানতে নারাজ- সে এদেশের আঞ্চলিকতাকে যেমন বিদাত বলে আবার আরবের আঞ্চলিকতাকে সুন্নত আকারে হাজির করে, উসুলে ফিকহের আদাত ও সুন্নাতের মধ্যে ফারাক তারা মানেন না। যেনবা ইসলাম সামাজিক আচারেও একাধিকতা অস্বীকার করে। অথচ ইসলাম যেমন সত্য প্রশ্নে শেরেকের একাধিকতাকে নাকচ করে, তেমনি কোন মানবিক ও ঐতিহাসিক বিষয়কে সত্য আকারে হাজির করাকেও নাকচ করে। এভাবে, আমরা সালাফি জাহেরি ও আধুনিক ভাষা চিন্তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / এসএস