শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সর্বশেষ ৫ নোবেলজয়ী সাহিত্যিক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

nobel copyমনযূরুল হক : 

সভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ, ২০১৫

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেলারুশের সাহিত্যিক ও অনুসন্ধানী নারী সাংবাদিক সভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ (Svetlana Aleksijevitj)। ২০১৪ সালেও সুইডিশ নোবেল কমিটির সংক্ষিপ্ত তালিকায় সভেতলানার নাম ছিলো। নারী নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার স্থান ১৪ তম। ৬৭ বছর বয়সী এই সাহিত্যিকের লেখনীকে বর্তমান সময়ের একটি 'স্মৃতিস্তম্ভ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সুইডেনের নোবেল কমিটি। নোবেলবিজয়ী এই ‘বেলারুশ লেখক’ মাতৃভাষা বেলারুশিতে লিখতে জানেন না, লেখেন রুশ ভাষায়। রুশ ভাষার যে পাঁচজন কবি-ঔপন্যাসিক নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তারা সবাই ছিলেন পুরুষ। সভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ প্রথম নারী রুশভাষী লেখক, যিনি নোবেল পেলেন।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস 'ওয়ার আনওমেনলি ফেস' ও ১৯৯৩ সালে প্রাকশিত 'জিংকি বয়স' বইয়ের জন্য সুপরিচিত। 'ওয়ার আনওমেনলি ফেস' এ পর্যন্ত অন্তত ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ‘ভয়েসেস অব ইউটোপিয়া’ ও  ইউক্রেনের চেরনোবিলে পারমাণবিক চুল্লির দুর্ঘটনার পরে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয় তার সবচেয়ে আলোচিত বই ‘ভয়েসেস অব চেরনোবিল ক্রনিকাল অব দি ফিউচার’। সভেতলানার সর্বশেষ গ্রন্থ ‘সেকেন্ডহ্যান্ড টাইপ’ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়। সাক্ষাতকারভিত্তিক প্রামাণ্য প্রতিবেদনের এসব গ্রন্থে সোভিয়েত আমল ও সোভিয়েতপরবর্তী যুদ্ধবিগ্রহ ও মানবজীবনের সঙ্কটকালীন নানা দিক উঠে এসেছে। যার ফলে তার লেখা অনেক সময়েই রাজনৈতিক নেতাদের রোষানলে পড়েছেন। তখন সভেতলানা বাধ্য হয়েছেন দেশ ছেড়ে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেনে আশ্রয় নিতে।nobel1

সেভেটলানা আলেক্সিভিচ ১৯৪৮ সালের ৩১ মে ইউক্রেনের ইভানো ফ্রান্কোভস্ক শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার মা ইউক্রেনের নাগরিক কিন্তু বাবা বেলেরুশের। তাই পরবর্তীকালে তার বেড়ে ওঠা হয় বেলারুশে। বাবা প্রথমে সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেলারুশে চলে আসেন। বাবা-মা দু’জনেই শিকতা শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি মিনস্ক ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন। প্রথমে পোল্যান্ডের সীমান্তে একটি সংবাদপত্রে চাকরি করতেন। পরে মিনস্কে-ই ফিরে এসে সাংবাদিকতার কাজেই যুক্ত থাকেন তিনি। এই সময়ে তিনি লেখালেখিতে অনেক জাতীয় পুরস্কার পান। তবে শুরুর দিকে স্কুল জীবনে তিনি কবিতা লিখতেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, বৃটেন, জাপান, চীন, ভারত, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, সুইডেন, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১৯টি দেশ থেকে এখন পর্যন্ত তার বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি প্রায় ২১টি ডকুমেন্টারি ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। এছাড়া তিনটি নাটক লিখেছেন, যা বুলগেরিয়া, জার্মান ও ফ্রান্সে মঞ্চস্থ হয়েছে। ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ড, কুট টুকোলস্কি সাহিত্য পুরস্কার, দ্য জার্মান প্রাইজ, পেন সাহিত্য পুরস্কার, আন্দ্রে সিনইয়াভিস্কি সাহিত্য পুরস্কার, দ্য লিপজিগ প্রাইজ, হারডার প্রাইজসহ আলেক্সিয়েভিচ বিশ্বের উল্লেখযোগ্য বহু সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন

সূত্র

১. Author Svetlana Aleksievich nominated for 2014 Nobel Prize, Blissett, Chelly, Yekaterinburg News. January 28, 2014

২.  Nobelpriset i litteratur till Svetlana Aleksijevitj [Nobel Prize in literature to Svetlana Aleksijevitj], Treijs, Erica, www.svd.se, Svenska Dagbladet, ৮ অক্টোবর ২০১৫
৩. Svetlana Alexievich wins Nobel Literature prize, BBC News, 8 October 2015

৪.  Svetlana Alexievich, investigative journalist from Belarus, wins Nobel Prize in Literature, Pbs.org, ২০১৩-১০-১৩

৫.  Belarusian Journalist Svetlana Alexievich Wins Literature Nobel : The Two-Way, NPR, Colin Dwyer, ২৮ জুন ২০১৫

৬.  http://m.prothom-alo.com/international/article/649615/

 

প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪
৬৯ বছর বয়সে সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন প্যাত্রিক মোদিয়ানো [mɔdjano]। নোবেল কমিটি তাঁকে মনে করেছে স্মৃতি ও বিস্তৃতির কারিগর। এর আগে তিনি পূর্বে তিনি ১৯৭২ সালে Les Boulevards de ceinture-এর জন্যে গ্র্যান্ড প্রিক্স ডু রোমান ডি এল'অ্যাকাডেমি ফ্রান্সেস, ১৯৭৮ সালে Rue des boutiques obscures এর জন্যে প্রিক্স গনকোর্ট, ২০১০ সালে ইনস্টিটিউট ডি ফ্রান্স কর্তৃক সারা জীবনের কৃতিত্ব স্বরূপ প্রিক্স মনডিয়াল সিনো ডেল ডুকা এবং ২০১২ সালে অস্ট্রিয়ান স্টেট প্রাইজ ফর ইউরোপিয়ান লিটারেচার পুরস্কার অর্জন করেন।nobel2

এ পর্যন্ত স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে মোদিয়ানোর ২৮টি গ্রন্থ, জার্মান ভাষায় ২১টি এবং সুইডিশে ১২টি। ব্রিটেনে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে পাঁচটি। তাঁর বইয়ের সংখ্যা তিরিশ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রিং রোডস: অ্যা নোভেল (১৯৭৪), ভিয়া ত্রিস্তে (১৯৭৭), অ্যা ট্রেস অব ম্যালিস (১৯৮৮), হানিমুন (১৯৯২)। আগে তার নোবেলজয়ী গ্রন্থ ‘মিসিং পারসন’ মাসে গড়ে ১০ কপি বিক্রি হতো না বলে দুর্নাম রয়েছে।

প্যাত্রিক মোদিয়ানোর জন্ম ৩০ জুলাই ১৯৪৫, ফ্রান্সের প্যারিস নগরীর উপকণ্ঠে ইহুদি বাবা আলবার্তো মোদিয়ানো ও বেলজীয় অভিনেত্রী মা লুইসা কলপাঁর সংসারে। বাবা-মায়ের দাম্পত্য সম্পর্ক মোটেই শান্তিপূর্ণ ছিলো না, একসময়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল আরো খারাপ। তিনি স্কুল পালিয়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। স্কুলের জ্যামিতির শিক্ষক রেমন্ড কুইনিয়াউ তাকে লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। ১৯৭০-এ বিয়ে করেন। তার দুই কন্যাসন্তান জিনা (১৯৭৪) ও ম্যারি (১৯৭৮)। কেবল উপন্যাস রচনা নয়, সিনেমা ও টেলিভিশনের জন্য যেমন চিত্রনাট্য লিখেছেন; ক্যাথেরিন দানিয়ুবের মতো একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। তার চিত্রনাট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, লুকাইম, লুসিয়েন (লুইস মালের সাথে), (১৯৭৩), লে ফিল্‌স দে হ্যাসকোয়িঙ দে পাস্কাল ওবেয়ার (১৯৯৫), বন ভয়েজ (জাঁ পল রাপেনের সাথে), (২০০৩)

যে-কোনো আলোচনায়, যে-কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিতি তিনজন ছাড়িয়ে গেলে তিনি অস্বস্তিবোধ করতে শুরু করেন। ১৯৭০-এ যখন দোমিনিককে বিয়ে করেন, ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা নিয়ে আসামাত্র একজনও ফিল্ম আনতে ভুলে যান। তিনি টকশোতে যান না, সাক্ষাৎকারও দেন না। লা ফিগারো পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘লেখালেখি যত না আনন্দের, বরং তার চেয়ে বেশি বোঝা। দীর্ঘ সময় ধরে বারবার আমি একাই স্বপ্ন দেখে আসছি আমাকে আর লিখতে হবে না, আমি মুক্ত। কিন্তু হায়! আমি মুক্ত হইনি।’

তাকে নিয়ে এ পর্যন্ত ফরাসি ভাষায় ১৭ জন লেখক নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তবে তার নোবেলপ্রাপ্তির পরে যে পরিসংখ্যানটি সামনে নিয়ে এসেছে তা হলো, প্যাত্রিক মোদিয়ানোর নোবেল সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তি আরো একজন ইহুদি নোবেল লরিয়েটের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ১১১ জন, তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ইহুদি। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক দুই ভাগ ইহুদি; সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের ১২.৬১ ভাগই ইহুদি বংশোদ্ভূত লেখকরা পেয়েছেন; আর তাঁদের সকলেই মূলত গদ্যশিল্পী। তাঁদের মধ্যে কেবল একজন ইসরায়েলের নাগরিক।

সূত্র

১. Patrick Modiano of France wins Nobel Literature Prize, Bas Wohlert, Camille, The Rappler, ৯ অক্টোবর ২০১৪

২.  Mario Modiano: Hamehune Modillano. The genealogical story of the Modiano family from 1570 to our days (pdf, 360 pages), www.themodianos.gr + M. Modiano, Athens 2000

৩. Ten Things to Know About Patrick Modiano, The Local, 9 October 2014. Retrieved 9 October 2014.

 

অ্যালিস মানরো, ২০১৩

২০১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান অ্যালিস মানরো। তার পুরো নাম অ্যালিস অ্যান মানরো (Alice Ann Munro)। তার নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রাপ্তি বিশ্বের পাঠকদের কানাডার সাহিত্য সম্পর্কে কৌতুহলী করে তুলেছে । ২০০৯ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি নিজ দেশ কানাডা এবং প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিতি পেলেও বহির্বিশ্বে তেমন পরিচিত ছিলেন না। এর  মূল কারণ হলো, মানরো উপন্যাস নয়, ছোটোগল্প লেখেন। আর সৃজনশীল সাহিত্যের আসরে ছোটোগল্প সবসময়ই পেছনের সারিতেই অবস্থান করছে।nobel3

এর আগে মানরো যে মাইলফলকটি পাড়ি দিয়েছেন, তা হলো ছোটো গল্পে তাঁর ম্যান বুকার প্রাপ্তি। বার্ষিক ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য ছোটোগল্প এর আগে বিবেচিত হয়নি। তবে তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য ইতোপূর্বে তিনবার কানাডার গভর্নর জেনারেল পুরস্কার লাভ করেন মানরো। ২০০৫ সালেই তিনি টাইম ম্যাগাজিনের সর্বাধিক প্রভাবশালী একশ’ জনের একজন নির্বাচিত হন।

ঠিক নারীবাদী লেখিকা বলতে যা বোঝায়, অ্যালিস মানরো তেমন কোনো অভিধা না পেলেও, তিনি একজন লেখিকা বলেই সম্ভবত মেয়েরাই তাঁর প্রায় সব গল্পের প্রধান চরিত্র হয়ে ওঠে। দক্ষিণ-পশ্চিম অন্টারিওর মফস্বল-শহুরে অঞ্চলে জীবনযাপনের যে সমস্যা, একটি মেয়ের নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মুখোমুখি হওয়া, জীবন নিয়ে এগিয়ে চলা–এ সবই তাঁর লেখার মূল উপজীব্য।

আমেরিকার ঔপন্যাসিক সিনথিয়া ওজিক বলেছেন, ‘মানরো আমাদের। এক জায়গায় তিনি বলেছেন যে, নয় বছর বয়স হবার আগে পর্যন্ত তিনি সিনেমার নায়িকা হতে চেয়েছিলেন। তিনি তখন সিনেমার নায়িকা হলে আমরা হয়তো আজকের নোবেলজয়ী মানরোকে পেতাম না।

অ্যালিস মানরোর জন্ম ১০ জুলাই, ১৯৩১ কানাডার অন্টারিও প্রদেশের উইংহ্যামে। তার প্রথম স্ত্রীর নাম জেমস মানরো (১৯৫১-১৯৭২) এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ছিলেন জেরাল্ড ফেমলিন (১৯৭৬-২০১৩)। মানরো বর্তমানে লেক হিউরনের পাশে ক্লিনটনে বসবাস করছেন।

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্যে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার ‘দি প্রোগ্রেস অব লাভ’ গ্রন্থটিকেই বিবেচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে, ড্যান্স অভ দ্য হ্যাপি শেডস (১৯৬৮), লাইভস অভ গার্লস অ্যান্ড উইমেন (১৯৭১). সামথিং আই হ্যাভ বিন মিনিং টু টেল ইয়্যূ (১৯৭৪), হু ডু ইয়্যূ থিংক ইয়্যূ আর? (১৯৭৮), দি মুন্স অভ জুপিটার (১৯৮২), ফ্রেন্ড অভ মাই ইয়ূথ (১৯৯০), ওপেন সিক্রেটস (১৯৯৪), দি লাভ অভ আ গুড উইমেন (১৯৯৮), হেইটশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, কোর্টশিপ, লাভশিপ, ম্যারেজ (২০০১), রান অ্যাওয়ে (২০০৪), দি ভিউ ফ্রম আ ক্যাসল রক (২০০৬), টুও মাচ হ্যাপিনেস (২০০৯) এবং ডিয়ার লাইফ (২০১২)।

সূত্র

১. Alice Munro, Forvo

২. Alice Munro Wins Nobel Prize in Literature, Bosman, Julie, New York Times, ১০ অক্টোবর ২০১৩

৩. The Nobel Prize in Literature 2013 - Press Release, ১০ অক্টোবর ২০১৩

৪. Alice Munro wins Man Booker International prize, The Guardian, ২৭ মে ২০০৯

 

মো ইয়ান, ২০১২

২০১২ সালে নোবেল জয়ী আমাদের মো ইয়ানের নাম আসলে গুয়ান মোয়ে (Guǎn Móyè)। তিনি মূলত একজন ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক। তবে, তিনি তাঁর ডাক নাম মো ইয়ান নামেই সমধিক ও বৈশ্বিকভাবে পরিচিত হয়ে আছেন। চীনা ভাষায় মো ইয়ান শব্দগুচ্ছের অর্থ হচ্ছে কথা বলো না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি জিম লিচের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ নামকরণ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, শৈশবে তাঁর বাবা-মা ১৯৫০-এর দশকে চীনের রাজনৈতিক আন্দোলনের সময়ে বাইরে কোন কথা বলতেন না।nobel4

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম সাময়িকীতে ডোনাল্ড মরিশন নামীয় এক প্রতিবেদক তাঁকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিষিদ্ধবিহীন লেখক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিশ্বব্যাপী চীনা গ্রন্থস্বত্ত্ব লঙ্ঘনকারী লেখকদের চেয়ে ব্যতিক্রমরূপে বর্ণনা করেছেন।

১৯৫৫ সালে মো ইয়ান শানডং প্রদেশের ডালন শহরের গাওমি কাউন্টিতে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ ডালন শহরকে তিনি তাঁর উপন্যাসে নর্থ-ইস্ট টাউনশীপ নামে উল্লেখ করেছেন। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করে পেট্রোলিয়াম কারখানায় কাজ নেন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৮১ সাল পর্যন্ত একাধারে লিখতে থাকেন। এখানেই তিনি সেনাবাহিনীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগে শিক্ষকতার পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৯১ সালে বেইজিং নর্মাল ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

তাঁর প্রথম উপন্যাস 'ফলিং রেইন অন এ স্প্রিং নাইট' প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে এবং ১৯৮৪ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘আ ট্রান্সপারেন্ট রাডিশ’ প্রকাশিত হয়ে বিশ্বে সাড়া ফেলে দেয়। তার বেশিরভাগ উপন্যাসই পূর্ব এশিয়ান ভাষাবিশারদ ও নটরড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাওয়ার্ড গোল্ডব্লাটের সহায়তায় ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়। রেড সরগাম তার প্রধান কীর্তি, যা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে জাং ইমু বিখ্যাত হয়ে যান এবং অর্জন করেন ‘গোল্ডেন বেয়ারসহ’ অসংখ্য এওয়ার্ড। মো ইয়ানকে বলা হয়, প্রলিফিক রাইটার; মাত্র ৪২ দিনে তিনি লিখে ফেলেন ‘লাইফ এন্ড ডেথ আর ওয়্যারিং মি আউট’ উপন্যাসটি।

১১ অক্টোবর, ২০১২ সালে ৫৭ বছর বয়সে সুইডিশ একাডেমি মো ইয়ানের নাম ঘোষণা করে। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদানে 'তাঁর সাহিত্যকর্মে রূপকথা, লোকগাঁথা, ইতিহাস এবং সমসাময়িক ঘটনাকে অলীক বাস্তবতার মাধ্যমে উপস্থাপনের অসাধারণ ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে'। চীনের মূল ভূ-খণ্ডের অধিবাসী হিসেবে তাঁর প্রথম এ পুরস্কারপ্রাপ্তি। তাঁর পূর্বে ২০০০ সালে চীনে জন্মগ্রহণকারী ফ্রান্সের অধিবাসী গাও জিংজিয়ান পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

সূত্র

১.  Holding Up Half The Sky, Morrison, Donald, TIME, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫

২. The Real Mo Yan, Leach, Jim,  Humanities 32 Jan/Feb ২০১১

৩. China's Mo Yan feeds off suffering to win Nobel literature prize, Wee, Sui-Lee, Reuters, ১১ অক্টোবর ২০১২

৪.  China's Mo Yan wins Nobel for "hallucinatory realism, Ahlander, Johan, Reuters, ১১ অক্টোবর ২০১২

৫.  Professor From Notre Dame Translates Nobel Winner’s Novels, Cohorst, Kate, University of Notre Dame, ১১ অক্টোবর ২০১২

৬. The Nobel Prize in Literature 2012 Mo Yan, Nobelprize.org, ১১ অক্টোবর

 

টমাস ট্রান্সট্রোমার, ২০১১

২০১১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন সুইডিশ কবি টমাস ট্রান্সট্রোমার (Tomas Tranströmer)। ১৯৯০-এ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে তার বাকযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু তার লেখালেখি অব্যাহত থাকে। ১৯৯০ থেকে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়ে চলছিলেন। ২০১০ সালে নোবেল পাবেন বলে প্রবল ধারণা হচ্ছিলো। অবশেষে ২০১১ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।nobel5

তিনি ১৯৩১ সালের ১৫  এপ্রিল তিনি সুডেনের স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করেছেন। পেশায় তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী ছিলেন। তবে কবিতার জন্যে নিজ জন্মভূমিতে পেয়েছিলেন তিনি ‘the best of the living poets’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন । তার কবিতা অনুবাদের মাধ্যমে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে অনেক আগে থেকেই । এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টিরও বেশি ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে। সমালোচকদের মতে, পাবলো নেরুদার পরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনুবাদিত কবি তিনি। নোবেল ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার, দি বনিয়ার অ্যাওয়ার্ড ফর পোয়েট্রি, নর্ডিক কাউন্সেল লিটারেচার প্রাইজ প্রভৃতি পুরস্কার অর্জন করেছেন।

ট্রান্সট্রোমারের কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দ্যা হাফ-ফিনিশড হেভেন, ওয়িনডস অ্যান্ড স্টোনস, বালটিক্স, ফর দ্যা লিভিং অ্যান্ড দ্যা ডেড, দ্যা সরো গন্ডলা ইত্যাদি । প্রায় ছয় দশকের লেখালেখির জীবনে তিনি লিখেছেন মাত্র ১২ কবিতার বই । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ সেভেনটিন পোয়েমস প্রকাশিত হয়, ১৯৫৪ সাল । ট্রান্সট্রোমারও তাঁর স্বতন্ত্র কাব্যভাষা ও অভিনব ‘স্টাইল’ দিয়ে তাঁর পরের জেনারেশনের কবিদের প্রভাবিত করছেন । শেষ বয়সে তিনি বেশ কিছু জাপানি হাইকুও লিখেছেন।

কবি ট্রান্সট্রমের তার জীবনের প্রায় সব সামার কাটিয়েছেন তার জন্মভুমি রানম্যারও দ্বীপে । বলা হয় যে রানম্যারও দ্বীপ তাঁর কল্পনায় ভাষা যুগিয়েছে, তাকে দিয়েছে চিত্রকল্পের আধার । তার কবিতা পড়লে মনে হয়, তিনি তার নিজের শহর স্টকহোমকে যেনো তিনি পৃথিবীর সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার প্রত্যয় নিয়েছেন।

তিনি ৮৩ বছরের সুদীর্ঘ জীবন পার করে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ লোকান্তরিত হন।

সূত্র

১. টমাস ট্রান্সট্রোমার,  গার্ডিয়ান, লন্ডন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ