শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ধারাবাহিক উপন্যাস : অশুদ্ধ পুরুষ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

upannashমনির প্রধান : সোমবার বৃহস্পতিবার । দুদিন রওশন আরার দুর্দিন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরপর। একেকটা মুহূর্ত পার হয় আর আতঙ্ক জমতে থাকে। একটি দীর্ঘ রাত সমস্ত পাশবিকতা নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে অক্টোপাসের মতো।
অন্য দিনগুলোতে এগারোটা সাড়ে এগারোটার মধ্যে বিছানায় গেলেও এ দুদিন যদ্দুর সম্ভব দেরি করেন রওশন আরা। চায়ের প্রতি তার খুব আগ্রহ নেই। তবু আয়োজন করে চা তৈরি করেন। কখনো টিভি অন করে শক্ত হয়ে সোফায় বসেন। কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে মনে হয়।

এ সমস্ত কিছুই নাজমুল হুদাকে এড়িয়ে যাবার জন্য। মনে কত আশা। তার দেরি দেখে যদি নাজমুল ঘুমিয়ে পড়েন। নাজমুল হুদা ঘুমান না। মাছ শিকারি পাখির মতো অপেক্ষায় থাকেন। তবু বিছানা বিলাসের আনন্দটি দারুণভাবে তাকে আনন্দ দেয়। বিছানায় মধ্য রাতের দিকে রওশন আরার মুখটি যেমন করুণ হয়ে ওঠে, তা চোখে ভাসতেই ঘুম পালিয়ে যায়।

এর সবকিছুই রওশন আরা বোঝেন। তবুও তিনি চা খাওয়ার ছুতোয়, খবর দেখার ভান করে কিছু সময় কাটাতে চান। অথৈ জলে পড়লে মানুষ যেমন খড়কুটোকেও আশ্রয় মানতে ব্যকুল হয় রওশন আরার অবস্থা অনেকটা সে রকম।

আজ রওশন আরা সময় কাটানোর কোনো বাহানায় গেলেন না। ফারহি এবং লুবনার ঘরে আলো নেভার পর বিছানায় শুয়ে পড়লেন। নাজমুল হুদা তার ঘরে আসেন পৌনে বারোটার দিকে। এসেই আজ বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়েন না। রওশন আরাকে আশ্চর্য করে দিয়ে ঘরের বাতি জ্বালান। টেবিলে রওশনের কিছু বই অগোছালো ছিল। সেগুলো গুছিয়ে রাখেন। আজকের ধোয়া কিছু কাপড় আলমিরায় তোলা হয়নি। চেয়ারের ওপর ঝুলে ছিল। তাই দেখে নাজমুল হুদা মৃদু অনুযোগের সুরে বলেন, জোতিটা যে কি করে! কাপড়গুলোও তুলে রাখেনি। বলে তিনি নিজেই কাপড়গুলো আলমিরায় তুলে রাখেন। রওশন আরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারেন না। যে মানুষ মশারির দড়িটা পর্যন্ত নিজ হাতে বাঁধে না, অথচ তার আজ এই পরিবর্তন।
নাজমুল হুদা কোমল গলায় ডাকেন, রওশন! এসো খানিক গল্প করি। বলতে বলতে তিনি আয়েশি ভঙ্গিতে বিছানায় পা তুলে বসেন।

কি ব্যাপার, কী নিয়ে গল্প করবে? তুমি আমাকে কিছু কি বলতে চাও?
স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলে গল্প করতে পারে না, বলো? তুমি শুধু শুধু সব কথায় কিন্তু খোঁজ। এটা ঠিক না।
কথাগুলো নাজমুল হুদা এমন সুরে বলেন, কোনো আক্রমণাত্মক উত্তর রওশন আরার মুখে যোগায় না। অথবা যোগালেও তার দিতে ইচ্ছে করে না।
রওশন কথা বলছো না যে?
কী বলবো?
তুমি মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কথা বলো। স্বামী-স্ত্রীর মনে পরস্পরের প্রতি কতো কথা জমে থাকে। কথার কি কোনো শেষ আছে? এসো আজ সারারাত আমরা গল্প করে কাটাই। তুমি সারাদিন স্কুলে থাকো। আমি থাকি কলেজে। দু’জন দু’জনকে সময় দিতে পারি কোথায়।
রওশন আরার কাছে মুহূর্তগুলো অবাস্তব অবাস্তব বলে মনে হয়। কথাগুলো কি সত্যি সত্যি লুবনার বাবার মুখ দিয়ে বেরুলো? এটা কি স্বপ্ন?
রওশন আরা কথা বলতে পারেন না। কিছু মুহূর্ত আসে যখন মনের কথাগুলো শব্দহীন হয়ে ভালোবাসায় পরিণত হতে থাকে। অজানা উৎসের পানিতে চোখ ভিজে ওঠে। এখন তেমন একটি সময়।
একটা কথা বলতে চাই রওশন। রাগ করবে?
না, বলো।
আমাদের তো ছয় রুমের প্রয়োজন হয় না। তাই না? ভাবছি ওই পাশের রুম তিনটা ভাড়া দিয়ে দিলে কেমন হয়? আমরা কেউই বাড়িতে থাকি না। বাড়িটা পাহারা দেবার জন্যেও লোক প্রয়োজন। জোতি এইটুকুন মেয়ে, বাইরে গিয়ে আমি ঠিক শান্তি পাই না।
রওশন আরা মনে মনে ভাবেন এই তাহলে ব্যাপার!
তুমি কি ভাড়ার ব্যাপারে ডিসিশান নিয়ে নিয়েছো?
না নেইনি। তবে নেব ভাবছি।
নাওনি ভালো করেছো। ডিসিশান নেয়ার অধিকার তোমার একার না। আমাদের দু’জনের। কারণ, বাড়ি বানানোর পেছনে চার পাঁচ লাখ টাকা আমারও খরচা হয়েছে।
রওশন, কথা কিন্তু ঝগড়ার দিকে গড়াচ্ছে।
কই, গড়াচ্ছে না তো।
আচ্ছা এসব বাদ দাও। একটা কথা বলো তো, স্বামী-স্ত্রী কি এক বিছানায় থাকে না? তোমার থাকতে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা আছে। আমি প্রতি রাতে দু’টা তিনটা পর্যন্ত জাগতে পারি না। এই মধ্য বয়সে এসে বিছানায় স্বামীর মনোরঞ্জন করতে করতে চড় থাপ্পর খাওয়াই আমার একমাত্র কাজ নয়। আরো অনেক কাজ আছে আমার। স্কুল করতে হয়। ছেলেমেয়েদের কেয়ার নিতে হয়। রান্না বান্না সামলাতে হয়। কারো কারো জন্য পারসোনালি চাও বানাতে হয়।
খোঁচাটা এড়িয়ে গিয়ে নাজমুল বলেন, কিন্তু স্বামীকে সঙ্গ দেয়া কি তোমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?
অবশ্যই পড়ে। সেটা আমি দিইও। কিন্তু সেক্স ম্যানিয়াক একটা মানুষের চাহিদা মেটানোর সামর্থ আমার নেই। নাজমুÑল, নাজমুল তুমি ফিপটি সিক্স। আমি ফোরটি ফোর। এটা পাগলের মতো প্রতিদিন বিছানায় যাবার বয়স নয়। আমাদের বাচ্চা কাচ্চারা বড় হচ্ছে। তুমি মাঝে মাঝেই রাতে সিনক্রিয়েট করো। এটা বাচ্চাদের ওপর মন্দ প্রভাব ফেলবে।
ধুর, খ্যাতা পুড়ি বাচ্চার। নিজের মনে আগে শান্তি আসুক, তারপর বাচ্চার চিন্তা। তুমি এক কাজ করো রওশন, যদি আমার চাহিদা মেটাবার সামর্থ তোমার না থাকে তবে সরে দাঁড়াও। আমি অন্য কাউকে খুঁজে নিই।
ভালো বলেছো। আমিও তাই চাই। তুমি বরং এক কাজ করো। বাড়িটা আমার নামে লিখে দিয়ে, ছেলেমেয়েদের রেখে তোমার যেখানে যেতে ইচ্ছে হয় যাও। কম বয়সী সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করে ইচ্ছা মতো মনের সাধ মেটাও।
‘বেশ্যা, মাগি, আমার চাহিদা মেটাতে তোমার ভালো লাগে না, না? সব বুঝি তো, বুঝি না? সারাদিন স্কুলে কলিকদের সঙ্গে ঢলাঢলি করো। সব রসকস সেখানেই শেষ করে দিয়ে আস।’ বলতে বলতে প্রচ- শক্তিতে এক চড় বসিয়ে দেন রওশন আরার গালে। মারের প্রচ-তায় রওশন আরা ছিটকে পড়েন। তার ফর্সা নরম তুলতুলে গাল নিমিষেই টকটকে লাল হয়ে যায়।
আরও মারতে ইচ্ছে করে নাজমুল হুদার। মেরে মেরে তক্তা বানিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু খুব সূক্ষ্ম হলেও রওশন আরার প্রতি তার একটা ভয় আছে। ভয়ের কারণ বিচিত্র। এক, রওশন আরার বাপ ভাইয়েরা গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা জানতে পারলে সমস্যা হতে পারে। দুই, যদি রাগের মাথায় রওশন কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলে তবে কিছু হোক বা না হোক, তার বেতনের চৌদ্দ হাজার টাকা হাতে আসার রাস্তা হয়ে যাবে বন্ধ। নাজমুল হুদা রাগে গজগজ করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। রওশন সেদিকে চেয়ে থেকে হাসেন, কিন্তু তার চোখ বেয়ে জল গড়ায় ঠিকই। চোখের পানিতে কখনো জয় পরাজয়ের কথা লিখা থাকে না। চলবে...

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ