বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ইসির নতুন নির্দেশনা ইরান সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম: চীন বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে কুকি-চিনের ৯ সদস্য গ্রেফতার আজমিরীগঞ্জে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন উদীচীর কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিব্রত: ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা শিগগিরই বাস্তবায়ন : তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা নিয়ে যা বলছে সৌদি মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে যোগদান করলেন মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী খুলনায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নেতার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

বেফাকের সাম্প্রতিক ঘটনা ও কিছু প্রস্তাব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা লিয়াকত আলী।।

প্রথমে বলতে চাই বেফাকের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে, যা প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তি অবগত আছেন। এ ঘটনায় অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো এ ঘটনায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা দশজন মানুষ যেখানে থাকে সেখানে এক দুজনের মধ্যে গড়বড় হতেই পারে। কারণ শয়তান সব সময় ব্যস্ত থাকে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য, ফেতনায় ফেলার জন্য। তাই বেফাকে এতজন মানুষ কর্মরত; তন্মধ্যে দুই তিনজন মানুষের মাঝে অনিয়ম ধরা পড়া এটা অস্বাভাবিক কিছু না। হতেই পারে। সুতরাং বেফাক নিয়ে নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এর পরের কথা হলো, বেফাক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে আকাবিরদের চোখের পানি, কুরবানি ও মেহনত সম্পৃক্ত রয়েছে। এজন্য এটা একটি মাকবুল (আল্লাহর দরবারে গৃহীত) প্রতিষ্ঠান বলে আমরা মনে করি। এটার একটা দলিল হচ্ছে, এখানে যদি কেউ অনিয়ম করে তাহলে সে ধরা পড়ে যায়। দু‘দিন আগে হোক বা পরে হোক। যাদের অনিয়ম ধরা পড়েছে, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটা এই প্রতিষ্ঠানের মাকবুলিয়াতের একটি আলামত। সাথে সাথে এটা উলামায়ে কেরামের একটি কারামাত। এখানে অনিয়ম করে কেউ পার পায় না। আর যাদের অনিয়ম ধরা পড়েছে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বেফাকের দায়িত্বশীলেরা কোনো অবহেলা করেননি বা বিলম্ব করেননি। সাথে সাথে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেজন্য আমি মনে করি বেফাক নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং এ ঘটনার ব্যাপারে আমি বলতে চাই এটা দীনী প্রতিষ্ঠানের একটি কারামাত যে, অনিয়ম করলে ধরা পড়তেই হবে। এ ঘটনা থেকে বর্তমানে যারা কর্মরত আছেন, ভবিষ্যতে যারা যুক্ত হবেন তাদের জন্য শিক্ষা নেয়া দরকার। যারা দীনি প্রতিষ্ঠানে বসে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে চান তারা কখনোই পার পাবেন না। অবশ্যই ধরা পড়বেন। দু’দিন আগে হোক কিংবা পরে হোক। এটা একটি শিক্ষনীয় বিষয় তাদের জন্য।

আর একটি বাস্তবতা হলো, বেফাক যে উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে উদ্দেশ্য হাসিলের এখনও অনেক পথ বাকি। বেফাক প্রতিষ্ঠার একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো, সারাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো সুসংগঠিত করা। এটা এখনও হয়নি। বরং বেফাক ছাড়াও আরও পাঁচটি বোর্ড রয়েছে। তবে বেফাক ছাড়া আরও যে পাঁচটি বোর্ড রয়েছে এটাকে আমি কোনো খারাপ মনে করি না। বা সবাইকে এক বোর্ডের অধীনে একত্রিত হওয়াও জরুরি মনে করি না। আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষার বোর্ড আগের চেয়ে এখন বেশি হয়েছে, এটা মূলত প্রতিষ্ঠান বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে। তেমনি সারাদেশে যে কওমি মাদরাসাগুলো রয়েছে এগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতেই এক একটি বোর্ড গঠিত হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে।

এইসব বোর্ড বা বেফাক অনেকটাই অঞ্চলভিত্তিক। যেমন গওহারডাঙ্গা ভিত্তিক (বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া) বোর্ডের অধীনে ওই অঞ্চলের মাদরাসাগুলো রয়েছে। চট্টগ্রামের ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, সিলেটের আযাদ দ্বীনী এদারা, উত্তরবঙ্গের তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া, ময়মনসিংহের ইত্তেফাকুল মাদারিস। এই বোর্ডগুলো অঞ্চলভিত্তিক। এরা সবাই আলাদাভাবে কাজ করছেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু যেটা জরুরি, সেটা হলো একটি ‘আন্তঃবেফাক’ কমিটি করা। যেমন আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষার যে বোর্ডগুলো রয়েছে সেগুলোতে ’আন্তঃবোর্ড’ নামে আলাদা একটি কমিটি আছে। তারা এক জায়গায় বসে চিন্তা করে। যাতে সারা বাংলাদেশের সকল স্কুল কলেজে অভিন্ন সিলেবাস হয়। পরীক্ষাগুলো একই সময়ে হয়। একই নিয়মে হয়। একই মানদ-ে হয়। গুণগত মান যেন বজায় থাকে। এসব নিয়ে তারা চিন্তাভাবনা করেন। তারা বাস্তবায়ন করেন আলাদা আলাদাভাবে। কিন্তু সম্মিলিতভাবে সবাই চিন্তা করেন। তেমনি আমাদের জন্য জরুরি একটি আন্তঃবেফাক কমিটি করা। যাতে এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যায়। এখন আমাদের অটোমেটিক একটি আন্তঃবেফাক কমিটি হয়ে গিয়েছে। সেটা হলো ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া’। এটাকে আমরা আন্তঃবেফাক কমিটি হিসেবে কাজে লাগাতে পারি। কেননা এখানে সব কওমি বোর্ডের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাছাড়া হাইয়াতুল উলয়ার দায়িত্বশীলেরা আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম। তারা বসে যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা সবার পাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

তাদের অনেক দায়িত্ব। এক নাম্বার দায়িত্ব হচ্ছে দাওরায়ে হাদিস বিষয়ে। দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা যেটি এখন হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে হচ্ছে, সারা বাংলাদেশে অভিন্ন সিলেবাস ও অভিন্ন প্রশ্নে। এটি কিন্তু আগেও চেষ্টা করা হয়েছিল। দুবার বা একবার হয়েও ছিল। গওহরডাঙ্গা বেফাক পরীক্ষা দিয়েছিল ঢাকা বেফাকের সাথে। পরে যেকোন কারণেই হোক, সেই ধারা অব্যাহত থাকেনি। তবে হাইয়াতুল উলইয়া হওয়ার কারণে সারা বাংলাদেশের দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা একসাথে হচ্ছে। এটা কিন্তু বিরাট একটি অগ্রগতি। বাংলাদেশ সরকার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান ঘোষণার সুবাদেই এটা হয়েছে। তবুও এটা আমাদের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে ইন শা আল্লাহ।

কিন্তু এখন যেটা দরকার সেটা হলো দাওরায়ে হাদিসের মে’আর বা মান ঠিক রাখা। সরকার মান ঘোষণা করেছে কিন্তু মে’আর ঠিক রাখার দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের। এই জিম্মাদারি উলামায়ে কেরামের ওপর দিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাই এটার বাস্তবায়ন করবেন। দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা যখন হাইয়াতুল উলইয়া গঠন হয়নি তখন বেফাকের অধীনে যে পরীক্ষা হতো সে পরীক্ষার চাইতে বর্তমানেরটা সহজ হয়ে গিয়েছে। যেমন আগে উলুমুল হাদিস ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হতো। কিন্তু আমি মনে করি, উলুমুল হাদিস একটি মুস্তাকেল (স্বতন্ত্র) বিষয় রেখে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হওয়া দরকার। তাহলে দাওরায়ে হাদিসের মান রক্ষা করা অনেকটা সহজ হবে। আগে এটির পরীক্ষা হতো মুসলিম সানির সাথে। কিন্তু এটাকে স্বতন্ত্র ও ১০০ নম্বরের একটি বিষয় করার প্রস্তাব আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে দিয়ে এসেছি। এ সম্পর্কে আমার হাতের লেখা ও কম্পোজ করা প্রস্তাবের অনেক কপিই এখনো খোঁজ করলে পাওয়া যেতে পারে বেফাকের অফিসে। সহজ করার জন্য যে ৫০ নাম্বার এখন বাদ দেয়া হয়েছে; আমি মনে করি, এটা আবার শুধু সংযোজন নয়, ১০০ নম্বরের একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। মোটকথা দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা কীভাবে আরও গুণগত মানসম্পন্ন হয় এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের চিন্তা করা উচিত।

তারপর মেশকাত বা ফজিলত স্তরের কথা । ফজিলত স্তর পর্যন্ত কোন পরীক্ষার খবর সরকার নেবে না। এটার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে উলামায়ে কেরামের ওপরে। কওমি মাদরাসাগুলোর ছয় বোর্ড যেহেতু আলাদা করে পরীক্ষা নেয় তাই তাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে ফজিলত স্তরের পরীক্ষাটি ভালোভাবে নেয়া। এ বছর এই ব্যাপারে একট বড় অগ্রগতি হয়েছে যে, হাইয়াতুল উলইয়া শর্ত করেছে, কোন শিক্ষার্থী যদি মেশকাত কোনো একটি বোর্ড থেকে পাস না করে থাকে, তাহলে দাওরায়ে হাদিসে পরীক্ষা দিতে পারবে না। এটা একটি বড় অগ্রগতি। কেননা আগে এমন ঘটনা বহু ঘটেছে যে, মেশকাত পরীক্ষায় অংশ নেয়নি কিন্তু দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছে। তবে মেশকাত বা ফজিলত স্তরের মে’আর ঠিক রাখা ও সত্যিকারের মানসম্মত করা প্রত্যেক বোর্ডের আলাদা দায়িত্ব।

আমাদের দরসে নেজামিতে ফজিলত মারহালা তিন বছরের । হেদায়া, জালালাইন ও মেশকাত। কিন্তু বেফাকে পরীক্ষা হয় শুধু মেশকাতের। এর আগের দুই বছরের কিতাবগুলো কোনো কোনো জায়গায় এক বছরে পড়ানো হয়। কোথাও বা দুই বছরে। কিন্তু এগুলো যে ঠিক মতো পড়ানো হচ্ছে তা নিশ্চিত করা বোর্ডগুলোর দায়িত্ব। দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় ডিগ্রিকে যখন তিন বছর করা হয়েছে তখন তাদের তিন বছর আলাদা আলাদা পরীক্ষা হয়। তিন বছরের ফল সমষ্টি করে একজন ছাত্রের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। আমাদের এখানে শুধু মেশকাতের পরীক্ষা হয়। আগের কিতাবগুলো কী পড়ানো হলো না হলো তার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার নয়। এটা বোর্ডগুলোর একটি ঘাটতি ।

এখানে আমার একটি প্রস্তাব আছে। সেটা হলো হেদায়া-জালালাইন এই দুই বছরের কিতাবগুলোরও পরীক্ষা নেয়া দরকার। কওমি ছয় বোর্ডের অধীনে হোক কিংবা হাইয়াতু উলয়ার অধীনে হোক। বরং হাইয়াতের অধীনে পরীক্ষা নেয়াটা হবে বেশি যুক্তিসংগত। কেননা সারাবিশ্বের এডুকেশনের একটি স্বীকৃত আইন হচ্ছে, গ্রাজুয়েশন এর সার্টিফিকেট কোনো বোর্ড দিতে পারে না। দিতে পারে একটি ইউনিভার্সিটি। হাইয়াতুল উলইয়া আমাদের একটি প্রশাসনিক ইউনিভার্সিটির সমমান সম্পন্ন। সেজন্য ফজিলত স্তরের পরীক্ষাটি হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে হওয়া দরকার। এখানেও একটি সুযোগ দেয়া যেতে পারে। যেমন সাধারণ শিক্ষায় ডিগ্রি পরীক্ষাটি হয় তিন বছরে। হাইয়া চাইলে দুই বছরে করতে পারে। আবার তিন বছরের ইখতিয়ার দিতে পারে। কেউ ইচ্ছা করলে তিন বছরে পরীক্ষা দেবে। তিন বছরের ফল একত্র করে তার নতিজা বা ফল নির্ধারণ করা হবে। কোনো ছাত্র যদি বলে, ‘আমি দুই বছরে পরীক্ষা দেবো’ তাহলে সে দুই বছরে পরীক্ষা দেবে। তারপর দুই বছর পরে পরীক্ষার রেজাল্ট সমষ্টিগতভাবে মিলিয়ে প্রদান করা হবে।

এরপর ছানাবিয়া উলইয়া। এটা আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষার উচ্চ মাধ্যমিকের সমান স্তরের। সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। কিন্তু আমাদের বেফাকে হয় ৮০০ নম্বরের পরীক্ষা। আসলে শরহেজামী ও শরহে বেকায়া এই দুই জামাত মিলেই ছানাবিয়া উলইয়া। দুই বছরের কিতাব ও বিষয় সাধারণ শিক্ষার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সিলেবাসের চেয়ে অনেক ব্যাপক ও ভারী। কিন্তু আমাদের বেফাকের অধীনে পরীক্ষা নেয়া হয় শুধু দ্বিতীয় বছরের বিষয়গুলোর। প্রথম বর্ষ বা শরহেজামী ক্লাসের কিতাবগুলো ঠিকমতো পড়ানো হচ্ছে কি না তার তদারকির কোনো ব্যবস্থা বেফাকের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না বললে অত্যুক্তি হবে না। অনেক মাদরাসা এ জামাতকে কাফিয়া জামাতের সাথে মিলিয়ে দেয়, যা অনেকটা গোজামিল বলা যেতে পারে। তাই এটা মানসম্পন্ন হয় না। কেউ যদি অবৈধ সুযোগ নিতে চায় তাহলে এখানে সুযোগ নিতে পারে। তাই এটাকে পরীক্ষার আওতায় আনা দরকার।

এরপর সাধারণ শিক্ষায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা এসএসসি বলে যে পরীক্ষা আছে বেফাকে সে স্তরের পরীক্ষাটি হয় না। এবার অবশ্য পরীক্ষা নেয়ার একটি সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। এটি অনেক আগে নেয়া দরকার ছিল। যা এখন বাস্তবায়নের মুখ দেখছে।

এরপর আসে নাহবেমির শ্রেণীর কথা । এই স্তরে যে পরীক্ষাটি হয় সেটা ক্লাস সেভেনের সমান ধরা হয়। কিন্তু এটাকে ক্লাস এইটের সমান করলে ভালো হয়। তাহলে জেএসসির সমমান ধরা যাবে।

তারপর আসে বিষয় বা সিলেবাস নির্ধারনের প্রসঙ্গ। যেহেতু এখন আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়, সেজন্য আমাদের মাধ্যমিক স্তর বা কাফিয়া/কুদূরি স্তর পর্যন্ত যে কিতাবগুলো রয়েছে তার সাথে বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচিতি এই বিষয়গুলো সংযোজন করা প্রয়োজন। তাহলে সাধারণ যে শিক্ষাব্যবস্থা তার সাথে তাল মেলানো উলামায়ে কেরামের জন্য সহজ হবে বলে আমি মনে করি।

নাহবেমির জামাতের ব্যাপারে আমার একটা প্রস্তাব আছে। বর্তমানে বাংলা ও গুলিস্তাঁ থেকে যেকোন একটি বিষয় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। যে বাংলা ভালো পারবে সে বাংলা পরীক্ষা দেবে। আর যে গুলিস্তাঁ ভালো পারবে সে গুলিস্তাঁ পরীক্ষা দেবে। তা না করে বরং বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা দরকার। আর এক্ষুনি যেটি করা যায়, তা হলো বাংলা সবার জন্য আবশ্যিক রেখে গুলিস্তাঁর বিকল্প ইংরেজি রাখা যেতে পারে।

এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনার জন্য হাইয়াতুল উলইয়া একটি কার্যকর প্লাটফরম হতে পারে। আন্তঃবেফাক প্লাটফরমের বিকল্প হিসেবে এটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে এবং সবার জন্য যে বিষয়গুলো উপযোগী সে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

কওমী মাদরাসাগুলোর পরিচালনাগত কিছু বিষয়ের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। অত্যন্ত তিক্ত হলেও সত্য যে, সাধারণভাবে আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোতে বিধিবদ্ধ ও লিখিত কোন চাকুরি বিধি নেই। জনবল কাঠামো, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাতা বা সুযোগসুবিধার কাঠোমো, শাস্তি, অব্যাহতি, অবসর, অবসরকালীন সুবিধা ইত্যাদির কোন নির্ধারিত কাঠামো নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলার স্বার্থে এই ঘাটতিগুলো পূরণের প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারেও হাইয়াতুল উলয়াকে কাজে লাগানো যায়। হাইয়াতুল উলয়ার মাধ্যমে একটি চাকুরিবিধি প্রনয়ন করে তা সব মাদরাসার জন্য অনুসরনীয় করা হলে সবারই উপকার হবে।

লেখক: শিক্ষা সচিব, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর, ঢাকা। সিনিয়র সহসম্পাদক: দৈনিক নয়া দিগন্ত

অনুলিখন: মোস্তফা ওয়াদুদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ